তুফানগঞ্জ: টেবিলের ওপর নামী ব্র্যান্ডের মদ। সঙ্গে কোল্ড ড্রিংকস, মিনারেল ওয়াটার আর চাট হিসেবে শিঙাড়া। তুফানগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের ইউনিয়ন রুমের এমন একটি দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ। আর কলেজের ইউনিয়ন রুমে মদের আসরের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় হইচই পড়ে গিয়েছে তুফানগঞ্জের শিক্ষা মহলে।
এব্যাপারে তুফানগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এনিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে এমনটা ঘটে থাকলে পদক্ষেপ করা হবে।’
বুধবার তুফানগঞ্জ শহর বিজেপি মণ্ডল সভাপতি বিপ্লব চক্রবর্তী কয়েক সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। আর তারপরেই শুরু হয় হইচই। সেই ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল ছাত্র নেতা ধীমান দেউড়ি ইউনিয়ন রুমে মদের গ্লাস হাতে বসে রয়েছে। কেউ একজন ভিডিও করছে, সেইসঙ্গে ধীমানের মদ্যপান নিয়ে রীতিমতো কমেন্ট্রিও করছে।
যদিও এআইয়ের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় এড়াচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূল ছাত্র নেতা ধীমানের সাফাই, ‘এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ভিডিওটি তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সমাজমাধ্যমে।’ আর ভিডিওর সত্যতা যাচাইয়ের পর কোনও তৃণমূল নেতা দোষী প্রমাণিত হলে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানানোর কথা বলেছেন তুফানগঞ্জ শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি শুভম সরকার।
১৯৭১ সালে স্থাপিত হয় তুফানগঞ্জ মহাবিদ্যালয়। ১৮টি বিভাগে বর্তমানে ৫ হাজারের ওপরে ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছেন। এই কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে একাধিক পড়ুয়া দেশ-বিদেশে চাকরি করছেন। গবেষণা করছেন। এছাড়াও এই কলেজের এনএসএস বিভাগ থেকে একাধিক ছাত্রছাত্রী রাজ্য ও জাতীয় স্তরে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। এমন একটি কলেজের ভিতরে এমন ঘটনার দৃশ্য প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। শিক্ষাঙ্গনের ভেতরে মদ্যপানের আসর বসার বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না কেউই। কেউ কেউ তো আবার কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অশনিসংকেত দেখছেন।
এবিভিপি’র রাজ্য সম্পাদক দীপ্ত দে বলেন, ‘শুধু তুফানগঞ্জ নয় রাজ্যের সমস্ত কলেজকে তৃণমূলের ছাত্র নেতারা নেশার আঁতুড়ে পরিণত করেছে। ছাত্রছাত্রীদের থেকে তোলাবাজি করে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে কলেজ ক্যাম্পাসে এইসব কাণ্ড করছে। কলেজগুলিতে যে পঠনপাঠন লাটে উঠে গিয়েছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।’ তাঁর সংযোজন, ‘এত বড় অন্যায়ের পরেও তৃণমূলের নেতাকে অধ্যক্ষ কলেজ থেকে বহিষ্কার না করলে বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হব।’
অন্যদিকে এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্জি বলেন, ‘তুফানগঞ্জ কলেজে এই ঘটনা প্রথম নয়। আগেও কলেজের অভ্যন্তরে ধর্ষণ থেকে শুরু করে একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১১ সাল থেকে নির্বাচন লাটে তুলে দিয়ে তৃণমূল সরকার গুন্ডাবাহিনীর হাতে কলেজগুলো তুলে দিয়েছে। কলেজগুলিতে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে এই দৃশ্য দেখতে হত না।’