Cooch Behar | আমাদের ছোট নদী ছিল নদী, হয়ে গিয়েছে খাল

Cooch Behar | আমাদের ছোট নদী ছিল নদী, হয়ে গিয়েছে খাল

শিক্ষা
Spread the love


নয়ারহাট: টলটলে জল ও চিকচিকে বালি। এই দুই মিলিয়েই যেন মহিষচরু নদী। প্রস্থে সামান্য হলেও আপাত গভীর এই নদীর কোনও কোনও অংশে আলতার মতো রাঙানো বালি নজর কাড়ে। নজরে পড়ে সাদা ধবধবে বকেদের মাছ শিকারের দৃশ্য। তবে নামে নদী হলেও মজে গিয়ে এখন খালে পরিণত হয়েছে। সুকুমার রায়ের ভাষায় বলতে গেলে, ‘এ যেন ছিল নদী, হয়ে গিয়েছে খাল’।

বর্ষায় দু’কূল ছাপিয়ে গেলেও শুখা মরশুমে নদীর শীর্ণকায় দশা। কোথাও হাঁটুসমান জল, কোথাও তারও কম। অর্থাৎ, কালের কবলে পড়ে ছোট্ট এই নদীটির বর্তমানে মৃতপ্রায় অবস্থা। মাথাভাঙ্গা-১ ব্লকের বৈরাগীরহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের সাতগাছিতে নদীর উৎস। এরপর শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নলঙ্গিবাড়ি হয়ে নদীটি কুর্শামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিষচরু বুথে নেন্দা নদীতে মিশেছে। নদীর দৈর্ঘ্য মেরেকেটে আট কিমি। বর্তমানে এই নদীর জল কৃষিকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রতিবেশী বাংলাদেশের একটি জলধারা ও সাতগাছির একটি জলধারার মিলিত প্রবাহ মহিষচরু নদী। আকারে ছোট হলেও এই নদীর নামে কুর্শামারি গ্রাম পঞ্চায়েতে দুটি বুথ রয়েছে। একটি উত্তর মহিষচরু। অপরটি দক্ষিণ মহিষচরু। দুটি বুথের মাঝখানে বয়ে চলেছে এই নদীটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য, একসময় এই নদীতে কয়েকটি গভীর কুঁড়া ছিল। বটতলি কুঁড়া, শিমুলতলি কুঁড়া, লাল কুঁড়া, বাচ্চাডোম কুঁড়া ইত্যাদি। কুঁড়ায় পাবদা, ভেটকি, বোয়াল, মাগুর, শিঙির মতো প্রচুর মাছ ছিল। একেকদিন একেকটি কুঁড়ায় গ্রামের লোকেরা দলবেঁধে মাছ শিকার করতেন। ছেঁচা জাল, নাপি জাল, ছাপি জালের পাশাপাশি কেকরি, ধোকরা, জাকই প্রভৃতি উপকরণ দিয়ে মাছ শিকারের কথা ভেবে এখনও নস্টালজিক হয়ে পড়েন স্থানীয় সন্তোষ বর্মন, দেবেন্দ্র বর্মনরা। সন্তোষের আক্ষেপ, ‘এখন কুঁড়া নেই। মজে গিয়েছে। আগের মতো মাছও নেই।’ দেবেন্দ্র জানান, মাছের পাশাপাশি নদীতে প্রচুর কাঁকড়া ও ঝিনুকও পাওয়া যেত। সেগুলি ছিল স্বাদে ভরপুর। সেসব দিন এখন অতীত। নদীর এই মরণাপন্ন অবস্থায় হতাশ মৎস্যপ্রেমীরা। স্থানীয়দের অনেকেই নদীটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

গতিপথ রুদ্ধ হলেও মহিষচরু নদীর সামান্য জল এখন চাষাবাদে ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকার অনেকেই পাম্পসেটের সাহায্যে জল তুলে তামাক ও আলুখেতে দিচ্ছেন। স্থানীয় জিতেন বর্মন জানান, কৃষিকাজে নদীর জল ব্যবহারে খরচ কম। তাই চাষিদের অনেকেই ঝুঁকছেন। তবে এই নদীর পাড় খাড়া হওয়ায় এর বুকে চাষাবাদ হয় না। শুধু মহিষচরুই নয়, পার্শ্ববর্তী এলাকায় এমন অনেক ছোট নদী সংস্কারের অভাবে কার্যত মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সেসব নদীগুলিকে বাঁচাতে সরকারের তরফে কোনও উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ। এব্যাপারে মাথাভাঙ্গা-১’র বিডিও শুভজিৎ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘নদী সংস্কারের বিষয়টি সেচ দপ্তরের আওতাধীন।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *