কোচবিহার: শহরের বাকি পুজোগুলি থেকে কোনওভাবেই আলাদা করা যাবে না প্রিয়গঞ্জ কলোনির যৌনকর্মীদের দুর্গাপুজোকে। বরং, সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগামী বছর তাঁদের পুজোর ৭০ বছর। জাঁকজমক, নিয়মনিষ্ঠা কিছুতেই খামতি নেই। এবারে বাজেট কিছুটা কম, ৮ লাখ টাকা। শেষমুহূর্তে চলছে চাঁদা তোলা। সবটাই ওঠে পল্লি চত্বর থেকে। চাঁদা সংগ্রহে কেউ বাইরে যান না। কিন্তু, পুজোয় নিয়মনিষ্ঠা সবার আগে বলে জানালেন পুজো কমিটির সভাপতি লক্ষ্মী সিং। পুজোর আয়োজন করতে গিয়ে তাঁদের পেশার কিছুটা ক্ষতি হয়। তবে হাসিমুখে তা স্বীকার করে নেন।
শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রিয়গঞ্জ কলোনিতে রয়েছে কোচবিহারের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লি। সারাবছরের তুলনায় দুর্গাপুজোর এই ক’দিন তাঁদের জীবনে অন্য আনন্দ বয়ে আনে। পাশাপাশি চলে পেশাগত ব্যবসাও। জুলাই-অগাস্ট থেকে শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি। পল্লির সকলের উপস্থিতিতে বৈঠকে পুজো নিয়ে সিদ্ধান্ত হয় বলে জানালেন কমিটির সম্পাদক বিজলি ঘোষ। প্রতিমা বায়না, ঢাকি, পুরোহিত সবকিছুই করেন নিজেরাই। এবার প্রতিমা আসছে মহিষবাথানের সঞ্জিত পালের কারখানা থেকে। ষষ্ঠীতে বোধন দিয়ে শুরু হয় মায়ের আরাধনা। আড়ম্বর নয়, নিষ্ঠা ও ভক্তি এই পুজোর একমাত্র সম্পদ। অষ্টমীর দিন ভোগ পৌঁছে দেওয়া হয় সব বাড়িতে। সেদিন পাড়ার কোনও ঘরে রান্না হয় না। দুর্গাপুজোয় যে চাঁদা ওঠে, তাই দিয়ে নভেম্বর নাগাদ হয় অষ্টপ্রহর। প্রতি বছর দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে ৩০০ দুঃস্থকে বস্ত্র বিতরণ করেন পল্লির মহিলারা। বছরের এই ক’দিন সবাই মেতে থাকেন উৎসবে। পাশাপাশি চলে কাজও। খরচের হিসাব রাখেন স্বপ্না বর্মন। প্রতি বছর নিষ্ঠার সঙ্গে এই দায়িত্ব সামলে আসছেন। পুজোর জন্য পাঁচটা রাস্তার মুখে তৈরি করা হয়েছে বিরাট তোরণ। সুন্দর করে সাজানো হয়েছে প্রতিটি রাস্তা। তাঁদের স্থায়ী মণ্ডপেই হবে মায়ের আরাধনা।
এই সময়ে বাইরের থেকে প্রচুর লোক আসায় যৌনকর্মীদের ব্যবসা যেমন ভালো হয়, তেমনি ঝুটঝামেলাও লেগে থাকে প্রচুর। আর ঠিক সেই কারণে এই ক’টা দিন ওই এলাকায় বিশেষভাবে নজরদারি ও টহল দেন এলাকার প্রবীণ মহিলারা। এবছর অবশ্য সেই ভিড় সামলানোর জন্য কিছু সিভিক ভলান্টিয়ার চেয়ে কোতোয়ালি থানার দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। একদিকে পেশা, অন্যদিকে মায়ের আরাধনা, এই দুটোকেই নিপুণ হাতে সামলে মাতৃবন্দনায় মেতে ওঠেন এখানকার প্রত্যেক দুর্গা।