কোচবিহার: অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার দিন শেষ। দুই বছর ধরে একটানা চেষ্টার পর অবশেষে কোচবিহার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর চিকুনগুনিয়া রোগ পরীক্ষার অনুমোদন পেল। আসন্ন এপ্রিল মাস থেকে জেলাতেই এই রোগের পরীক্ষা করা যাবে। এতদিন জেলায় এই সংক্রান্ত উপসর্গ দেখা দিলে রোগীদের নমুনা উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠাতে হত। সেখান থেকে রিপোর্ট আসার পর চিকিৎসা শুরু হত। এর ফলে মাঝের থেকে অনেকটা সময় নষ্ট হত। এখন কোচবিহারেই পরীক্ষা শুরু হলে দ্রুত চিকিৎসা করা সম্ভব বলে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। এপ্রিলের শুরু থেকেই এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এই পরীক্ষা করা হবে। অধ্যক্ষ নির্মলকুমার মণ্ডলের কথায়, ‘চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার জন্য পৃথক মেশিন রয়েছে। এবার রাজ্য থেকে কিট এলেই পরীক্ষা শুরু করা যাবে।’
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সংখ্যায় কম হলেও মূলত বর্ষার মরশুমে কোচবিহারে ফি-বছর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর হদিস মেলে। এই রোগটি এডিস মশার কামড় থেকে ছড়ায়। জ্বরের পাশাপাশি শরীরের সন্ধিস্থলগুলিতে তীব্র ব্যথা সহ ফুসকুড়ি দেখা দেয়। বর্তমানে বর্ষা আসতে আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। এ সময় মশা সহ পতঙ্গবাহিত রোগ বাড়ে। এজন্য এখন থেকেই বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। ইতিমধ্যেই চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও অবধি জেলায় ১২ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। মেডিকেল কলেজ ও মহকুমা হাসপাতালগুলির পাশাপাশি মার্চ মাস থেকে দেওয়ানহাট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও ডেঙ্গি পরীক্ষা চালু হয়েছে। এবার নয়া সংযোজন চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা।
চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার জন্য কোচবিহার জেলা থেকে সাধারণত প্রতি বছর ২০-২৫ জনের রক্তের নমুনা উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে অন্তত পাঁচ-ছ’জনের রক্ত পরীক্ষায় এই রোগের জীবাণু পাওয়া যায়। তবে স্বস্তির বিষয়, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রবণতা খুবই কম। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ চিহ্নিত করে ঠিকমতো চিকিৎসা শুরু না করা হলে জ্বর কমলেও পরে গাঁটে ব্যথা সহ নানা সমস্যা থেকে যায়। ফলে রোগীকে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে হয়। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য রোগীদের বেশি করে রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা ও দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, কোচবিহারে চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলেই উপসর্গ দেখা দেওয়া রোগীদের পরীক্ষা করা সহজ ও দ্রুত হবে। তাতে কম সময়ের মধ্যেই বেশি সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে।