কোচবিহার: রবিবার রামনবমীর দিন শাসক-বিরোধী দুই দলের নেতাদের ভিন্ন মেজাজে দেখা গেল। বিজেপির নেতারা যেখানে কেউ শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে লাঠি খেললেন কিংবা ওড়ালেন গেরুয়া ধ্বজা। সেখানে শাসকদল তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে দেখা গেল মিশ্র ছবি। সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া যখন রামপুজোয় মাতলেন তখন মন্ত্রী উদয়ন গুহ আবার রামনবমীর কর্মসূচি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। আবার নিজের বাড়িতেই নবরাত্রির পুজোয় মজলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। জামাইবাজার এলাকায় রাম মন্দিরেও পুজো দেন তিনি। তবে এসবের মধ্যেও যে বিষয়টি কারও নজর এড়ায়নি সেটা হল কোচবিহার শহরে রামনবমীর মূল শোভাযাত্রায় কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের অনুপস্থিতি।
বিগত কয়েক বছরে শহরের রামনবমীর মূল শোভাযাত্রায় একেবারে প্রথম সারিতে থাকতেন বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ। তিনি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর এবারই ছিল প্রথম রামনবমী। কিন্তু এবার তাঁকে শোভাযাত্রায় দেখা যায়নি। নিশীথের যুক্তি, ‘এবছর আমি বাইরে রয়েছি।’ তবে নিশীথকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়নের কথায়, ‘নিশীথ প্রামাণিকের ভোট থাকলে ভক্তি থাকে, নাহলে নয়। যখন ভোট থাকে তখন সে বড় করে গণেশপুজো করে, রামনবমীর মিছিলে হাঁটে। এখন ভোটে হেরে গিয়েছে। তাই ভগবানের থেকেও দূরে সরে গিয়েছে।’
অন্যদিকে, যে কোনও উৎসবেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা জনসংযোগের জন্য মুখিয়ে থাকেন। কিন্তু রামনবমীতে তৃণমূলের নেতৃত্ব কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। জেলা স্তরে রামনবমী উপলক্ষ্যে কোনও অনুষ্ঠান না হলেও গ্রামীণ এলাকায় রামনবমী উদযাপিত হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। সিতাইয়ে তৃণমূলের সাংসদ রামপুজোয় অংশ নেন। সেখানে বিজেপিকে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘বিজেপি রামকে রাজনীতির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে।’ অন্যদিকে, সকালে মদনমোহনবাড়িতে পুজো দেন তৃণমূলের দুই নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও পার্থপ্রতিম রায়।
এদিকে, বিজেপির বিধায়করা এদিন রামনবমীর বিভিন্ন কর্মসূচিতেই দিনভর ব্যস্ত রইলেন। কোচবিহার-২ ব্লকের ঢিগারপুল এলাকায় শোভাযাত্রায় লাঠি খেলায় অংশ নিতে দেখা যায় কোচবিহার উত্তরের বিধায়ক সুকুমার রায়কে। বিজেপির অন্য বিধায়ক মালতী রাভা, মিহির গোস্বামী, নিখিলরঞ্জন দে-কেও রামনবমীতে দেখা গিয়েছে। এসএফআইয়ের তরফে বিভিন্ন জায়গায় ঘোষণা করা হয়েছিল রামনবমীতে তারা পাহারা দেবে। কেউ কোথাও অশান্তি করলে তার মোকাবিলা করা হবে। কিন্তু এদিন শোভাযাত্রা চলাকালীন এসএফআইয়ের তরফে কোচবিহারে সেরকম কোনও কর্মসূচি দেখা যায়নি। সংগঠনের জেলা সম্পাদক প্রাঞ্জল মিত্র অবশ্য বলেছেন, ‘সন্ধ্যায় সংগঠনের কার্যালয়ে একটি শিবির করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কাউকে কোথাও ভয়ভীতি দেখালে তার অভিযোগ শিবিরে এসে করা যাবে। সেই হিসেবে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ এছাড়া, জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় স্তরে রামনবমীর শোভাযাত্রা হয়েছে। সেই মিছিলগুলিতে শাসক-বিরোধী দুই দলের নেতা-কর্মীদেরই উপস্থিতি নজরে পড়েছে।