College | অন্ধকারেই ভবিষ্যৎ! অবহেলায় দুই বিশ্ববিদ্যালয়

College | অন্ধকারেই ভবিষ্যৎ! অবহেলায় দুই বিশ্ববিদ্যালয়

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: ‘চাল নেই, চুলো নেই, মুখে বড় কথা’- বহুল প্রচলিত প্রবাদটিই দার্জিলিং হিল এবং দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তরের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তব পরিস্থিতি যথার্থভাবে তুলে ধরে। ২০১৯ সালে রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয় দার্জিলিং হিল বিশ্ববিদ্যালয় আইন। ২০২১-এর ১৬ নভেম্বর থেকে সরকারিভাবে চালু হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়টি (Darjeeling Hills College)। একই বছর পথ চলা শুরু হয় দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরও (Dakshin Dinajpur College)। নামে বিশ্ববিদ্যালয় হলেও কোথাওই শিক্ষার ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। সম্প্রতি দুই বিশ্ববিদ্যালয়েই স্থায়ী উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছেন। এর বাইরে সাড়ে তিন বছরেও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই একজন কর্মী বা শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। নেই নিজস্ব পাঠ্যক্রম। তবুও আইন ভেঙে স্নাতকোত্তরে ছাত্র ভর্তি নিয়ে ডিগ্রি প্রদান করছে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আইন এবং নিয়ম বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে কর্মসমিতি (ইসি) এবং কোর্ট। উপাচার্য একক সিদ্ধান্তে কোনও কাজ করতে পারেন না। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ইসি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ‘কাউন্সিল’ তৈরি করা হয়। রাজ্য সরকার এবং উপাচার্য মনোনীত স্থানীয় শিক্ষাবিদরা কাউন্সিলের সদস্য হন। সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে কাউন্সিল ইসি ও কোর্ট গঠন করে। যতক্ষণ ইসি তৈরি না হচ্ছে ততক্ষণ কাউন্সিলই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। ইসি বা কোর্ট গঠন দূর অস্ত, দার্জিলিং হিল বা দক্ষিণ দিনাজপুর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই এখন পর্যন্ত কাউন্সিল গঠন করাই হয়নি। ফলে কার সিদ্ধান্ত অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় সেই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। কাউন্সিল থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি করতে হয় বিষয়ভিত্তিক বোর্ড অফ স্টাডিজ। সেই বোর্ডই তৈরি করবে সিলেবাস, প্রশ্নপত্র। আজ পর্যন্ত সেসব কিছুই হয়নি।

ধারে নেওয়া হলঘর এবং মাঝেমধ্যে অনুরোধের জেরে ক্লাস নিতে আসা দু’চারজন অতিথি শিক্ষকের বদান্যতায় জোড়াতালি দিয়ে কোনওরকমে চলছে দুই বিশ্ববিদ্যালয়। মংপুর আইটিআইয়ে বোর্ড সাঁটিয়ে চালানো হচ্ছে হিল বিশ্ববিদ্যালয়। পাহাড়ের এক কোণে থাকা ওই এলাকায় যাতায়াত বা থাকার ব্যবস্থা নেই। পড়ুয়াদের জন্য করা হয়নি হস্টেলের ব্যবস্থা। ফলে ক্লাস হয় না বললেই চলে। কয়েকটি কলেজের শিক্ষকদের মাঝেমধ্যে ক্লাস নেওয়ার জন্য বলেকয়ে রাজি করিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। তবে তাঁদের থাকা বা যাতায়াতের জন্য যথেষ্ট পারিশ্রমিক না মেলায় শিক্ষকরা মংপুমুখী হচ্ছেন না। ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘটা করে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা প্রচার করা হয়েছিল তার দুর্দশায় হতাশ পাহাড়ের শিক্ষাবিদ থেকে নেতা সকলেই। জিটিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ অনীত থাপার কথা, ‘আমরা বারবার রাজ্য শিক্ষা দপ্তরকে অনুরোধ করেছি দ্রুত পরিকাঠামো তৈরি এবং শিক্ষক নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় সচল কার হোক। সত্যি কথা বলতে, যতটা গুরুত্ব দিয়ে কাজ হওয়া দরকার তা হয়নি। আবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।’ দার্জিলিংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক অমর লামার বক্তব্য, ‘মংপুতে যা হচ্ছে সেভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ করা দরকার।’

স্থানীয়রা রসিকতা করে দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়েছেন ‘ভ্রাম্যমাণ বিশ্ববিদ্যালয়’। ২০২১-এ শুরুর সময় একটি সরকারি ভবনও জোটেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কপালে। বালুরঘাটের উত্তর চকভবানী এলাকার এক চিকিৎসকের বাড়ি ভাড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়েছিল। ২০২৩ সালে ঠিকানা বদলে বিশ্ববিদ্যালয় চলে যায় বালুরঘাট মহিলা কলেজের একটি ভবনে। বছর খানেক আগে দ্বিতীয়বার জায়গা বদলে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম চলছে বালুরঘাট বিএড কলেজের একটি পরিত্যক্ত হস্টেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিমানবন্দরের পাশে একটি জমি চিহ্নিত হলেও যা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। কাগজে-কলমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শ-দুয়েক পড়ুয়া রয়েছে। তবে আদৌ তাঁরা কতটা শিক্ষা পাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্দশায় ক্ষুব্ধ জেলার শিক্ষক মহল। সাহিত্যিক বিশ্বনাথ লাহার কথা, ‘একটি বেসরকারি সংস্থার ঘরে বিশ্ববিদ্যালয় চলছে এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।’ যদিও আশা ছাড়ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রণবকুমার ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা সবরকমভাবেই চেষ্টা করছি। সমস্যা কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিতভাবেই পদ্ধতিগতভাবে এগিয়ে যাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, পরিকাঠামো তৈরির আর্থিক সহযোগিতা পেতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ১২-বি ধারায় অনুমোদন পাওয়া বাধ্যতামূলক। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনওটিই এখনও সেই অনুমোদন পায়নি। ডিগ্রি প্রদানের জন্য মঞ্জুরি কমিশনের বাধ্যতামূলক ২-এফ ধারায় অনুমোদন আছে কি না তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। সবমিলিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠেছে হাজারো প্রশ্ন। (চলবে)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *