রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: ভেজাল কয়লায় ক্ষতি হচ্ছে চা কারখানার। অথচ কয়লা মাফিয়াদের দাপটে সেই কয়লাই নিতে বাধ্য হচ্ছেন চা মালিকরা! অভিযোগ, তরাইয়ের চা কারখানাগুলিতে যে কয়লা সরবরাহ করা হচ্ছে, সেই কয়লায় প্রচুর ভেজাল মেশানো থাকছে।
ঘোষপুকুরের কয়েকটি জায়গায় উন্নতমানের কয়লা গাড়ি থেকে নামিয়ে তার সঙ্গে মেশানো হচ্ছে পাথর, কাঠের পোড়া অংশ এবং প্রচুর পরিমাণে জল। নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা প্রবীর শীল বলেন, ‘অসম এবং হলদিয়া থেকে এখানকার চা কারখানাগুলিতে কয়লা আসে। সেই কয়লায় বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মকভাবে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। যার জেরে কারখানার তো ক্ষতি হচ্ছেই, উৎপাদন খরচও মারাত্মক বেড়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করাটা জরুরি।’ শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক অবধ সিংহলের দাবি, বাগান মালিকদের তরফে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। তবে লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
শিলিগুড়ি মহকুমা এবং সংলগ্ন উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লক মিলিয়ে ১০০টির বেশি চা কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সেট চা বাগানের সংখ্যা ৬০। বাকিগুলি বটলিফ চা কারখানা রয়েছে। প্রতিটি চা কারখানা চালানোর জন্য প্রতিদিন গড়ে ৬০০০-৮০০০ কেজি ভালো কয়লা প্রয়োজন হয়। মাসে হিসাব কষলে গড়ে ২০০ টনের বেশি কয়লা নেয় এক একটি চা কারখানা। কিন্তু দিন-দিন কয়লায় ভেজালের মাত্রা মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আমদানিও বাড়াতে হচ্ছে।
বাগান মালিকরা জানাচ্ছেন, দিনে ৬০০০ কেজি খাঁটি কয়লা দিয়ে কারখানায় দিনভর বয়লার চালু থাকার কথা। কিন্তু ভেজাল মিশ্রিত কয়লার তাপ খুব অল্প সময় স্থায়ী হচ্ছে। ফলে কয়লা কিনতে হচ্ছে। এতে পাল্লা দিয়ে চায়ের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। ভেজাল কয়লার বেশিরভাগটাতেই পাথর, মাটি, কাঠের পোড়া অংশ থাকছে। যা মেশিনের ক্ষতি করছে।
চা শিল্পপতি সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত অসমের দিসপুর থেকে এবং হলদিয়া হয়ে ইন্দোনেশিয়ার কয়লা শিলিগুড়ি মহকুমা এবং চোপড়ার কারখানাগুলিতে আসে। এ রাজ্যে কয়লা ঢোকার পরেই বিভিন্ন জায়গায় সেগুলির সঙ্গে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। যোগীঘোপা থেকে শুরু করে শিলিগুড়ির ঘোষপুকুর সহ ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় রীতিমতো ভেজাল মেশানোর জন্য বিশেষ ‘ব্যবস্থা’ তৈরি হয়েছে। গাড়ি থেকে উন্নত কয়লার অর্ধেকটা নামিয়ে নিয়ে সেই জায়গায় কালো জলে ধোয়া পাথর, মাটি, পাথুরে বালি এবং কিছুক্ষেত্রে কাঠ পুড়িয়ে সেই গুঁড়োও মেশানো হচ্ছে। বাগান মালিকরা বলছেন, কয়লা কারখানায় পৌঁছানোর পরে সেগুলির মধ্যে কালো রং করা পাথর, মাটি পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময় মেশিনে পাথরগুলি আটকে বয়লার কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু কয়লা সিন্ডিকেটের দাপট এতটাই যে কেউ তাতে বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা প্রশাসনিক পদক্ষেপ চাইছেন।