সানি সরকার, শিলিগুড়ি : ক’দিন আগে সকলের মুখেই ছিল, আর কবে? চড়া রোদে তাপমাত্রার উত্থানে বৃষ্টির জন্য এমন প্রশ্ন শোনা গিয়েছিল কালিম্পং থেকে কোচবিহার পর্যন্ত। এখন সর্বত্রই প্রশ্ন, থামবে কবে। অন্তত কয়েকদিনের জন্য বৃষ্টিতে বিরতি ঘটুক, চাইছে প্রত্যেকেই। আবহাওয়ার যা পূর্বাভাস, তাতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে। তবে তার আগে ‘শেষ কামড়ে’ দু’দিন অস্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে। যে কারণে সোমবারের পর মঙ্গলবারের জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায়। বাকি পাঁচ জেলায় রয়েছে কমলা সতর্কতা। বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও গৌড়বঙ্গের তিন জেলায় নেই কোনও সতর্কতা। আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহার বক্তব্য, ‘মৌসুমি অক্ষরেখার উত্তরে স্থায়ী অবস্থানের জন্য কয়েকদিন ধরেই উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হচ্ছে। তবে চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে মৌসুমি অক্ষরেখার দিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে কয়েকদিন বৃষ্টির তীব্রতা এবং ব্যাপ্তি থাকবে না। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে।’
নিউল্যান্ডস চা বাগানে ২৯১.৮ মিলিমিটার, কুমারগ্রাম চা বাগানে ২৫০.৭ মিলিমিটার এবং সংকোশ চা বাগানে ২১০.২ মিলিমিটার, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ। শুধু এই তিন চা বাগানে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে তাই নয়, ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে ডুয়ার্সের একাধিক জায়গায়। রবিবার রাতে ভারী বৃষ্টি হয়েছে তরাইয়ের একাধিক জায়গা সহ পাহাড়েও। প্রতিটি জায়গাতেই বিপর্যস্ত হয়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। কার্যত উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে। কয়েক ঘণ্টার জন্য জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল শিলিগুড়ি শহর পর্যন্ত।
প্রাক বর্যায় বিক্ষিপ্তভাবে কিছুটা বৃষ্টি হলেও এ বছর বর্ষার শুরুতে তেমন বর্যণ হয়নি উত্তরবঙ্গে। যে কারণে প্রতিটি জেলাতেই ঘাটতির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। বৃষ্টিবিমুখ অবস্থায় হাহাকার শোনা গিয়েছিল প্রতিটি জায়গা থেকে। কিন্তু এখন কিছুতেই যেন বর্ষণ বিরতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। একসময় বৃষ্টির ঘাটতিতে শস্য এবং সবজি উৎপাদনে চরম দুশ্চিন্তা ছিল। এখন একই পরিস্থিতি টানা, অতি বৃষ্টির জন্য। বঙ্গোপসাগরে একের পর এক নিম্নচাপ সৃষ্টির জন্য বর্ষার শুরুতে শুষ্ক ছিল উত্তরবঙ্গ। এখন মৌসুমি অক্ষরেখার ঘাঁটি গেড়ে বসার জন্য টানা বৃষ্টি। তবে নতুন করে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাগর পরিস্থিতি অনুসারে ১৩ অগাস্টে নিম্নচাপটি তৈরি হয়ে ১৪ অগাস্ট থেকে শক্তি সঞ্চয় শুরু করবে আশপাশের মেঘ টেনে। ফলে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্ষের তাপে তপ্ত হবে উত্তরবঙ্গ। ফের গরমে হাঁসফাঁস শুরু হবে, অন্তত তিন-চারদিন।