সানি সরকার, শিলিগুড়ি: দুপুরের চড়া রোদের পর রাতে এক পশলা বৃষ্টি। তাপমাত্রার পতনে স্বস্তির ঘুম। নাহ, সেই সুদিন আর নেই। লড়াইটা এখন সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যেও। তাই মধ্যরাতেও রাতজাগা শহর শিলিগুড়ি, পাহাড়ও। এখন আর সুইৎজারল্যান্ডের আবহাওয়ার (Climate) সঙ্গে তুলনা চলে না দার্জিলিংয়ের। বরং শিলিগুড়ির (Siliguri) সঙ্গে তুলনা চলছে জয়সলমেরের। তাপমাত্রার নিরিখে বৃহস্পতিবার তো রাজস্থানের শহরটিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে উত্তরের অলিখিত রাজধানী। জয়সলমেরের গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেখানে ছিল ৩৫.২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, সেখানে শিলিগুড়ি দিনের শেষে দাঁড়িয়ে ৩৭.৪-এ। হিমালয়ের পাদদেশে থাকা শহরটিতে তাপমাত্রার অনুভূতিতে ছিল চরম অস্বস্তি।
ক’দিন আগে বৃষ্টি যখন ঝড়ল আকাশ থেকে, তখন স্বস্তির হাসি ফিরেছিল উত্তরে। শ্রাবণের ধারায় ‘বর্ষা মঙ্গল’-এর ছবি স্পষ্ট ধরা পড়েছিল। কিন্তু সেই ছবি উধাও হতে সময় নেয়নি বেশি। ফের তপ্ত দুপুর, গরম রাতেও। এ যেন শ্রাবণে ভাদ্রের ‘আগমনী বার্তা’। স্বচ্ছ নীলাকাশ, সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে শরীরে। শুধু আকাশে নেই পেঁজা তুলোর ভেলাগুলি। শরতের ভেলার এসময় দেখা না পাওয়াটাই দস্তুর। কিন্তু নেই যে বর্ষায় ঘনঘটাও। ‘শ্রাবণের আকাশে যদি মেঘ না থাকে, তাকে কি ভরা বর্ষার মাস বলা যায়’, প্রশ্নটা তুলে দিলেন দেশবন্ধুপাড়ার রিনা সরকার। তাঁর মতো সূর্যনগরের ছোটন দত্তের বক্তব্য, ‘বর্ষা এখন পিছিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। যেমনটা চলছে, তাতে আগামীতে হয়তো ভাদ্র-আশ্বীনে বর্ষার বৃষ্টি পাওয়া যাবে।’ যেহেতু এখন বৃষ্টিবিমুখ শিলিগুড়ি, তাই দুর্গাপুজোর দিনগুলি ভাসবে বলেও আশঙ্কা গাঢ় হচ্ছে। হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে বর্ষার প্রবেশ ঘটেছে ৩০ মে, গরম পরিস্থিতিতে কেউ বিশ্বাস করছেন না।
বর্ষার মেঘ উধাও হল কেন? এর মূলে রয়েছে বঙ্গোপসাগরে একের পর এক সৃষ্ট হওয়া নিম্নচাপ। নিম্নচাপ যখনই সৃষ্টি হচ্ছে, তখনই শক্তি সঞ্চয়ের জন্য আশপাশের মেঘ টেনে নিচ্ছে। কিন্তু ‘রিটার্ন গিফট’ সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে কোথায়? আশ্বস্ত করছেন আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা। তিনি বলছেন, ‘বর্তমানে উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছালেই উত্তরবঙ্গের আকাশেও মেঘের আনাগোনা ঘটবে। দিনের তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমবে। শনিবার শিলিগুড়িতেও বৃষ্টির ব্যাপ্তি এবং তীব্রতা পাওয়া যাবে।’ তবে এমন বৃষ্টির স্থায়িত্ব যে বেশিদিনের নয়, তা অবশ্য তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। চলতি মাসের শেষে ফের তাপমাত্রায় পুড়তে হবে। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকায় বাস্তব তাপমাত্রার থেকে অনুভূতি হবে অন্তত ৮-৯ ডিগ্রি বেশি। বর্ষায় বৃষ্টি বিমুখ হওয়ায় ঘাটতির পরিমাণও বাড়ছে দিন-দিন। ১ জুন থেকে ২৪ জুলাইয়ের হিসেবে দার্জিলিং জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি ৪৩ শতাংশ। এসময়কালে পাহাড়-সমতল মিলিয়ে ১৩৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৭৭১ মিলিমিটার। কালিম্পংয়ে ঘাটতি মাত্র ১৬ শতাংশ। এই হিসেবে দার্জিলিং পাহাড়েও বৃষ্টি হয়েছে অনেকটা স্বাভাবিক। পোড়াকপাল শুধু সমতলের। আগামীতে যতই বৃষ্টি হোক, এই ঘাটতি পূরণ অসম্ভব, মনে করছেন খোদ আবহবিদরাই।