লন্ডন: ভাঙা পা নিয়ে ব্যাটিং করেছেন ঋষভ পন্থ। আঙুলের চোটকে উপেক্ষা করে লর্ডসে বোলিং করে জয়ের উইকেট তুলে নেন ইংল্যান্ডের স্পিন তারকা শোয়েব বশির। অন্তিম টেস্টে ভাঙা কাঁধ, একহাতে ব্যাট নিয়ে ক্রিস ওকস নেমেছিলেন মহম্মদ সিরাজ, প্রসিধ কৃষ্ণাদের আগুনে গোলার মুখোমুখি হতে। মৌখিক যুদ্ধ, বিতর্কের উত্তাপ ছাপিয়ে ব্যাট-বলের মরিয়া দ্বৈরথে এক ইঞ্চি জমি না ছাড়ার পণ। সিরিজ শেষে যদিও সব তাপ-উত্তাপ ভুলে বন্ধুত্বের স্পর্শ।
ক্রিস ওকস এক সাক্ষাৎকারে সেই বন্ধুত্বের গল্প শোনালেন। অকপট স্বীকারোক্তি, তাঁর বলে ঋষভের পা ভাঙার জন্য ‘ক্ষমা’ও চেয়ে নিয়েছেন ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটারের কাছে। একইভাবে তাঁর কাঁধের চোট নিয়ে প্রতিপক্ষ ঋষভ, শুভমান গিলদের চিন্তা মন ছুঁয়ে গিয়েছে।
গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওকস বলেছেন, ‘আমার ছবিতে স্যালুট করার ইমোজি দিয়ে ইনস্টাগ্রামে ঋষভের পোস্ট চোখে পড়েছিল। উত্তরে ওকে ধন্যবাদ জানাই। বলি, এই ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি, তোমার পা ঠিক আছে। এরপর আমাকে ভয়েস মেসেজ পাঠায় ঋষভ। যেখানে বলে, আশা করি, তুমি ঠিক আছ। দ্রুত সেরে ওঠো। সেই শুভেচ্ছা রইল। শীঘ্রই ফের দেখা হচ্ছে আমাদের।’ এরপরই ঋষভের পা ভাঙার জন্য ওকস দুঃখপ্রকাশ করেন।
চতুর্থ টেস্টে ওকসের বল খেলতে গিয়েই পা ভাঙে। ব্যাটিং করলেও উইকেটকিপিং করতে পারেননি। ম্যাচের পর দেশে ফিরে এসে রিহ্যাবে রয়েছেন ঋষভ। ঋষভের চোটের পর ফুটবলের মতো ক্রিকেটেও প্লেয়ার বদলের দাবি উঠতে শুরু করে। ওকস যদিও এর সঙ্গে সহমত নন। পরিষ্কার জানালেন, এই ব্যাপারে তিনি বেন স্টোকসের যুক্তিকেই সমর্থন করেন।
ইংল্যান্ডের তারকা পেসারের মতে, তিনি ১৮ বছর ধরে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। বোঝেন একজন ক্রিকেটার চোট পেয়ে উঠে গেলে দলের কী পরিস্থিতি হয়। তবে এই চাপই দলকে শক্তি জোগায়। শূন্যতা পূরণের অন্য পথ বের করার বাড়তি তাগিদ তৈরি হয়। নিঃসন্দেহে যা ইতিবাচক দিক। সেদিক থেকে পরিবর্ত প্লেয়ারের প্রয়োজন নেই, সাফ দাবি ওকসের।
ওকসের কথায়, পরিবর্ত প্লেয়ার নেওয়ার বদলে এক হাতে ব্যাট নিয়ে নামার পক্ষে তিনি। বলেছেন, ‘মানছি দৌড়োনোর সময় অসুবিধা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, হাত জামার বাইরে বেরিয়ে যাবে। তারপরও বলব, ১০০ রান বাকি থাকলেও আমি নামতাম। মাঠে নামার সময় সবাই দাঁড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছে। এটা বিশেষ অনুভূতি। বেশ কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটারও আমার প্রচেষ্টাকে সম্মান জানিয়েছে। শুধু আমি কেন, আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও একইভাবে ওই পরিস্থিতিতে মাঠে নামত।’
ম্যাচের পর শুভমান বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন ওকসের সঙ্গে। বলেছেন, ‘শুভমান তখন আমাকে বলে, দারুণ সাহসিকতা দেখিয়েছ। ওকে পালটা বলি, তোমার অবিশ্বাস্য সিরিজ কাটল। দারুণ খেলেছ। কৃতিত্ব তোমার দলেরও প্রাপ্য। গোটা সিরিজেই দুই দলের প্লেয়াররা জয়ের জন্য ঝাঁপিয়েছে। কেউ এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি ছিল না। আকর্ষণীয় সিরিজের কৃতিত্বটা তাই সবার প্রাপ্য। সেদিক থেকে অমীমাংসিত সিরিজ, ২-২ ফল একদম ঠিক।’