Champasari | স্বর্গের পল্লিতে নরকের যন্ত্রণা

Champasari | স্বর্গের পল্লিতে নরকের যন্ত্রণা

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: চম্পাসারি শ্রীগুরু বিদ্যামন্দির পার করে পুরনিগম এবং পঞ্চায়েতের সীমান্তের সেতু পার করে ডান দিকের গলি ধরে মেঠোপথে প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তা (Champasari)। খানাখন্দে ভরা ওই রাস্তায় যেতে যেতে দূর থেকে কালিম্পংয়ের নীল পাহাড়ও দেখা যাবে। ওই পথ ধরেই পৌঁছোতে হবে ডাবগ্রাম-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মাঝুয়া বস্তিতে। শহরের কোলাহল এবং কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে ওই এলাকায় পৌঁছোলে মনে হবে যেন স্বর্গের দুয়ার। কিন্তু ওই স্বর্গদুয়ারেই নরক সমান যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে সর্বহারা কিছু পরিবারকে।

মাঝুয়া বস্তির শেষ প্রান্তে বাঁধের ওপারেই লালটং-চমকডাঙ্গির ১৩১টি পরিবারকে পুনর্বাসন দিয়েছে রাজ্য সরকার। মাসছয়েক আগে পুনর্বাসন দেওয়ার সময় প্রত্যেক পরিবারকে দুই কাঠা করে জমি এবং একটি করে ত্রিপল দেওয়া হয়েছিল। এখনও সেই জমি এবং ত্রিপলই ভরসা ওই ১৩১টি পরিবারের। বৃষ্টি মাথায় ত্রিপলের তলায় রাত কাটাচ্ছে পরিবারগুলি।

মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া পোশাকি নাম ‘তিস্তাপল্লি’। পুনর্বাসনের পর থেকে এখনও  পর্যন্ত তিস্তাপল্লিতে সরকারি কোনও আধিকারিকের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কথা হচ্ছিল মণিকা ছেত্রীর সঙ্গে। তাঁর বাপের বাড়ি সরস্বতীপুর চা বাগান এলাকায়। ৩০ বছর আগে বিয়ে করে চমকডাঙ্গিতে স্বামীর ঘরে এসেছিলেন। গত ৩০ বছরে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়নি তাঁর। সর্বস্ব গিয়েছে তিস্তার গ্রাসে। দুই ছেলেমেয়ে এবং স্বামীর সঙ্গে কিছুদিন ত্রিপলে কাটিয়েছেন। এরপর মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকছেন। অন্যদিকে, ছেলে এবং স্বামী মিলে তৈরি করছেন ছোট কাঠের ঘর। দু’দিন হল স্বামীকে সহযোগিতা করতে তিনিও মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। এদিন ভাঙাচোরা নির্মীয়মাণ ঘরের কাছে মেয়েকে নিয়ে বসেছিলেন। শুকনো মুড়ি খেতে খেতে বলছিলেন, ‘সব নিয়ে গিয়েছে তিস্তা। ছেলেমেয়েকে নিয়েই চিন্তা। কোনওক্রমে ধারদেনা করে মাথা গোঁজার জায়গা তৈরি করছি।’

গত বছরের অক্টোবর মাসে তিস্তার গ্রাসে চলে যায় মহানন্দার জঙ্গলঘেরা লালটং এবং চমকডাঙ্গি বস্তি। লালটং বস্তিতে তাও কিছু মানুষ নিজেদের শেষ সম্বল বাঁচাতে পেরেছিলেন। কিন্তু চমকডাঙ্গিতে সবকিছু গিলে খেয়েছে তিস্তা। মাথা গোঁজার জায়গা তো গিয়েছেই, সমস্ত দরকারি নথিও হাতছাড়া হয়েছে। ওই পরিবারগুলিকে ডাবগ্রাম-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মাঝুয়া বস্তিতে পুনর্বাসন দিয়েছে সরকার। সেই সময় দিন তিনেকের শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছিল। এরপর আর কেউ ফিরে তাকায়নি বলে অভিযোগ।

শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল চারদিকে ত্রিপল দিয়ে তৈরি ছোট ছোট ঝুপড়ির মধ্যে মাথা তুলছে কয়েকটি কাঠের দোতলা ঘর। কারও কারও স্ট্রাকচার তৈরি হয়েছে। যাঁদের সর্বস্ব গিয়েছে তাঁরা ওই ত্রিপলের নীচেই সংসার পেতেছেন। বুধবার রাতভর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে ওই পরিবারগুলিকে। শুধু যে ঘরের সমস্যা তা নয়, ১৩১টি পরিবারের জন্য একটিমাত্র শৌচালয় এলাকায়। তাই বাধ্য হয়ে কেউ ত্রিপল দিয়ে তো কেউ বেড়ার উপর ছাউনি দিয়ে তৈরি করেছেন শৌচালয়। এখনও পরিবারগুলি ছন্নছাড়া। কেউ পরিবারকে অন্যত্র রেখে এসেছেন। কেউ আবার বৃষ্টিতে আশপাশের কংক্রিটের পরিত্যক্ত ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও পৌঁছায়নি ওই এলাকায়। পানীয় জলের জন্য যেতে হবে মাঝুয়া বস্তিতে। সেখানে একটি স্ট্যান্ডপোস্ট ভরসা। নয়তো বেশিরভাগই পাশের মহানন্দার জলের ভরসায় থাকছেন। সোজা পথে শহরের দিকে যেতে হলে একমাত্র সাইকেলই ভরসা এলাকাবাসীর। কারণ টোটো কিংবা অন্য কোনও গণপরিবহণ পেতে হলে অন্তত চার কিলোমিটার হাঁটতে হবে তাঁদের। তবে সময় বাঁচাতে এবং মহানন্দা পার হয়ে বেঙ্গল সাফারির পেছনে তরিবাড়ি গ্রামে চলে যাচ্ছেন তাঁরা। সেখান থেকে টোটো বা হেঁটেই প্রধান সড়কে পৌঁছোচ্ছেন।

এদিন দুপুর সাড়ে তিনটা নাগাদ মহানন্দা পার হয়ে এলাকায় ফিরছিলেন প্রীতম লামা। তাঁর বক্তব্য, ‘ঘরের খাবার আনতে বাজার যেতে হত। নদী পার হলে তরিবাড়িতেই দোকানপাট রয়েছে। সহজেই নদী পার হয়ে সেখানে পৌঁছনো যায়। তাই নদী পার হয়েই যাতায়াত করি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *