Boeing 727 Plane | রহস্যময় অন্তর্ধান: অ্যাঙ্গোলার আকাশ থেকে উধাও আস্ত বিমান! আজও অধরা জট

Boeing 727 Plane | রহস্যময় অন্তর্ধান: অ্যাঙ্গোলার আকাশ থেকে উধাও আস্ত বিমান! আজও অধরা জট

শিক্ষা
Spread the love


উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ২০০৩ সালের ২৫শে মে। অ্যাঙ্গোলার লুয়ান্ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রানওয়েতে দাঁড়িয়েছিল একটি বোয়িং ৭২৭ বিমান (Boeing 727 Plane)। পুরোমাত্রায় জ্বালানি ভরা, উড়ানের জন্য প্রস্তুত। হঠাৎ করেই এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে। দুজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি সেই বিমানে চড়ে বসেন এবং কোনওপ্রকার অনুমতি ছাড়াই সেটি নিয়ে উধাও হয়ে যান আফ্রিকার আকাশে। এরপর কেটে গিয়েছে দুই দশকেরও বেশি সময়। ব্যাপক আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান চালানো সত্ত্বেও সেই বিমান বা তার চালকদের আর কোনওদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই ঘটনা আজও বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান চালনা রহস্যগুলির মধ্যে অন্যতম। কে ছিল সেই দুই ব্যক্তি? কেনই বা তারা বিমানটি নিয়েছিল? আর বিমানটি গেলই বা কোথায়? এই প্রশ্নগুলো আজও অমীমাংসিত।

কি ঘটেছিল সেদিন:

২০০৩ সালের সেই মে মাসের বিকেলে লুয়ান্ডা বিমানবন্দরের কর্মীরা লক্ষ্য করেন, দীর্ঘদিন ধরে পার্ক করে রাখা একটি বোয়িং ৭২৭ (রেজিস্ট্রেশন নম্বর N844AA) হঠাৎ করেই চালু হয়েছে। বিমানটি American Airways-এর মালিকানাধীন ছিল এবং কয়েক বছর ধরে Luanda Airport-এ পড়েছিল, সম্ভবত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। এটি তখন স্থানীয় কোম্পানি TAAG Angola Airways-এর কাছে লিজে ছিল। কিন্তু সেইদিন, কর্তৃপক্ষের কোনও নির্দেশ ছাড়াই বিমানটি রানওয়েতে নেমে আসে এবং দ্রুত গতিতে উড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানের ভেতরে দু’জন ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল। তাদের একজন ছিলেন আমেরিকান নাগরিক বেন চার্লস প্যাডিল্লা, যিনি একজন বিমান মেকানিক এবং প্রাইভেট পাইলটের লাইসেন্সধারী ছিলেন। অন্যজন ছিলেন জন এম. মুতানতু, কঙ্গোর নাগরিক এবং প্যাডিল্লার অ্যাঙ্গোলার সহকারী।

বিমানটি টেক-অফ করার পর থেকেই এটি রাডারের বাইরে চলে যায়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিষয়টি জানতে পারে এবং একটি বড় আকারের অনুসন্ধান অভিযান শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অ্যাঙ্গোলা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এই রহস্যের কিনারা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আটলান্টিক মহাসাগর এবং আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অনুসন্ধান চালানো হয়, স্যাটেলাইট চিত্র পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বিমানটির কোনও ধ্বংসাবশেষ, কোনও সংকেত, এমনকি কোনও ছোট সূত্রও পাওয়া যায়নি। বেন প্যাডিল্লা এবং জন মুতানতু, দুজনেরই কোনও খোঁজ মেলেনি। তাদের পরিচয় এবং উদ্দেশ্য নিয়ে আজও রহস্য ঘনীভূত।

রহস্যের জট ও সম্ভাব্য তত্ত্ব:

এই অন্তর্ধানের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব চালু আছে।

চুরি ও ব্যক্তিগত লাভ: সবচেয়ে প্রচলিত তত্ত্ব হল, বিমানটি চুরির উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল। বেন প্যাডিল্লার পরিবারের দাবি, তিনি লিবিয়ায় একটি বিমান সংস্থায় কাজ করার জন্য বিমানটি নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এর আগে ওই একই মডেলের বিমান মেরামত করেছেন। হয়তো তারা বিমানটি বিক্রি করে মোটা টাকা রোজগারের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল, এত বড় একটি বিমান নিয়ে কোথায় যাওয়া সম্ভব, যা কেউ ধরতে পারবে না?

সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ: ৯/১১ হামলার পর বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে চরম সতর্কতা ছিল। অনেকেই অনুমান করেছিলেন যে, বিমানটি কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের হাতে পড়েছে এবং এটিকে কোনও হামলার কাজে লাগানো হতে পারে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে এর দায় স্বীকার করা হয়নি, বা বিমানটি কোনও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয়েছে তারও কোনো প্রমাণ মেলেনি।

দুর্ঘটনা: অনেকে মনে করেন, হয়তো বিমানটি উড়ানের কিছুক্ষণ পরেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল এবং আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে তলিয়ে গিয়েছে। কিন্তু যদি তাই হয়, তাহলে কেন এর কোনও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেল না? বিমানটিতে প্রচুর জ্বালানি ছিল, যা একটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারত, যার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যেত।

সরকারি গোপনীয়তা: কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ্বাসীরা মনে করেন, এই ঘটনার পেছনে সরকার বা কোনও শক্তিশালী সংস্থার হাত থাকতে পারে। হয়তো বিমানটি কোনও গোপন মিশনে ব্যবহৃত হয়েছিল, বা এর অন্তর্ধানের আসল কারণ ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর সপক্ষে কোনো দৃঢ় প্রমাণ নেই।

অমীমাংসিত প্রশ্ন:

বেন প্যাডিল্লা এবং জন মুতানতুর আসল উদ্দেশ্য কী ছিল?
কেন তারা অনুমতি ছাড়াই বিমানটি নিয়েছিল?
বিমানটি কি আসলেই বিধ্বস্ত হয়েছিল, নাকি অন্য কোথাও অবতরণ করেছিল?
কীভাবে এত বড় একটি বিমান সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে?

অ্যাঙ্গোলায় বোয়িং ৭২৭-এর রহস্যময় অন্তর্ধান আজও বিমান চালনা ইতিহাসের এক অমীমাংসিত অধ্যায়। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা সব ব্যাখ্যাকে ছাপিয়ে যায়। বেন প্যাডিল্লা এবং জন মুতানতু কোথায় গেলেন, আর সেই সুবিশাল বিমানটির ভাগ্যে কী ঘটল, তা হয়তো কোনওদিনও জানা যাবে না। কিন্তু এই রহস্যময় ঘটনা আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের কল্পনার খোরাক জোগায়, এবং অজানার প্রতি আমাদের কৌতূহলকে উসকে দেয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *