উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কথায় বলে, অন্যের জন্য ভালো কিছু করলে সেই ভালোটা নিজের কাছেও ফিরে আসে। রক্তদানের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি। কারণ, রক্তদান (Blood Donation) করে অপরের ভালো তো করছেনই, সঙ্গে নিজেরও শারীরিক উপকার করছেন। বিশেষ করে হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে রক্তদান বেশ উপকারী বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
সাধারণত রক্তদানের আগে একটা ছোট্ট পরীক্ষা করা হয়, যাতে দেখা হয় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমবেশি বা রক্তচাপের অনিয়ম আছে কি না প্রভৃতি। এমনকি আপনার যদি বিরল রক্তের গ্রুপ হয় তাহলে সেটাও জানা যায়। এই প্রাথমিক চেকআপ থেকেই আপনি সতর্ক হতে পারেন এবং অবস্থা খারাপ হওয়ার আগে পদক্ষেপ করতে পারেন।
নিয়মিত রক্তদান রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝঁুকি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া আয়রন নিয়ন্ত্রণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। িসনিয়ার কার্ডিওলজি কনসালট্যান্ট ডাঃ উজ্জ্বল কুমারের মতে, ‘আয়রন জরুরি, কিন্তু সেটা অতিরিক্ত হলে ফ্রি র্যাডিক্যালস তৈরি করতে পারে, যা রক্তনালির আস্তরণের ক্ষতি করে। এতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। রক্তদান করলে আপনি অতিরিক্ত আয়রন কমানোর পাশাাপশি ঝঁুকি কমাতে পারেন।
যাঁদের হেরিডিটারি হেমোক্রোমাটোসিস রয়েছে তাঁদের জন্য এই পদ্ধতি বেশ সহায়ক। এটি এমন এক অবস্থা যেখানে শরীর অতিরিক্ত আয়রন তৈরি করে। আর তাই এই ধরনের মানুষকে প্রায়ই রক্তদান করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
রক্তের ঘনত্ব আপনার হৃদযন্ত্র কতটা দক্ষভাবে কাজ করছে তাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। ঘন রক্ত, রক্ত জমাট বঁাধার ঝঁুকি বাড়ায় এবং হৃদযন্ত্রে চাপ ফেলে। রক্তদান সাময়িকভাবে রক্তকে পাতলা করতে সাহায্য করে। এটি রক্তপ্রবাহ উন্নত করার পাশাপাশি রক্ত জমাট বঁাধার ঝঁুকি কমায়। প্রতিবার রক্তদানের সময় আপনার শরীর তাজা রক্ত তৈরিতে উৎসাহিত করে। এই পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যকর ব্লাড প্রোফাইল বজায় রাখতে এবং ভাসকুলার হেলথ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
তাছাড়া নিয়মিত রক্তদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে যঁাদের রক্তচাপ বর্ডারলাইনে আছে বা সামান্য উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে রক্তদানের প্রভাব সামান্য কমতে পারে। সম্ভবত রক্তের পরিমাণ সাময়িক কমে যাওয়া এবং ভাসকুলার ফাংশন উন্নত হওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে।
পাশাপাশি রক্তদানের মানসিক উপকারিতাও রয়েছে। এতে কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমে এবং সামগ্রিকভাবে ভালো থাকার বোধ বাড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
যতই উপকারিতা থাক, রক্তদান নিয়ে ভুল ধারণাও কম নয়। অনেকেই রক্তদানের পরে দুর্বলতা বা অবসাদ হবে ভেবে রক্তদান করতে চান না, যা আদৌ ঠিক নয়। বরং হাইড্রেটেড থাকলে এবং বিশ্রাম নিলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।
ডাঃ কুমারের মতে, ‘রক্তদান আপনার হার্টের যত্নের পরিপূরক হোক, প্রতিস্থাপন নয়। সেইসঙ্গে সুষম খাবার, নিয়মিত শরীরচর্চা, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল চেক করা এবং তামাক বর্জনের মাধ্যমে হার্টকে সুস্থা রাখুন।’
সুতরাং, এরপর থেকে কোনও রক্তদান শিবির দেখলে মনে রাখবেন, শুধু অন্যের জীবনই রক্ষা করছেন না, নিজেরও উপকার করছেন।