Blind Date | ব্লাইন্ড ডেটে ফাঁদ, পকেট গড়ের মাঠ

Blind Date | ব্লাইন্ড ডেটে ফাঁদ, পকেট গড়ের মাঠ

ব্লগ/BLOG
Spread the love


সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: ‘কত কি যে সয়ে যেতে হয়, ভালোবাসা হলে…’ অখিলবন্ধু ঘোষের গাওয়া গানটিতে হয়তো অপেক্ষা, বিরহ, হারিয়ে ফেলার ভয় ইত্যাদি সহ্য করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মন দিয়ে অজান্তে প্রতারণার ফাঁদেও যে পড়তে হয়, তার হাতেগরম কিছু উদাহরণ রয়েছে আমাদের শহর শিলিগুড়িতে (Siliguri)। ‘ব্লাইন্ড ডেটে’ (Blind Date) সঙ্গিনীকে নিয়ে পাবে যাওয়ার কথা ভাবলে সাধু সাবধান। সঙ্গিনী আর পাব কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে খসতে পারে হাজার হাজার টাকা।

কীভাবে?

একটি গল্প বলি আসুন। লেখাপড়ার চাপে এতদিন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে ছিল সাগ্নিক। উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোতেই বাবার থেকে স্মার্টফোন আদায় করে দু’তিনটে সমাজমাধ্যমে একসঙ্গে অ্যাকাউন্ট খুলেছে সে। তারপর বন্ধুত্বের অনুরোধ, টানাটানা চোখ দেখে পিছলে পড়া ইত্যাদি ইত্যাদি। উলটোদিক থেকেও আশকারা মিলছে পুরোদস্তুর। কিন্তু যার সঙ্গে দিনরাত কথা হচ্ছে, তাকে একটিবার দু’চোখ ভরে তো দেখতে হয়।

ঠিক হল তারিখ। সাগ্নিক প্রধাননগরে নতুন ক্যাফের কথা বলেছিল, তরুণী সটান না করে দেয়। সে-ই ঠিকানা দিয়েছিল সেবক রোডের পাবটির। অবশেষে এল সেই দিন। টেবিলে বসে দূর থেকে লাল ওয়ানপিসে তাকে দেখামাত্রই কিউপিডের তির বিঁধল হৃদযন্ত্রে। গুনগুনিয়ে উঠল সে, ‘নাম ছিল তার গুলবাহার, দেখতে ভারী চমৎকার…’

কিন্তু বেচারা এতদিন ঘুঘু দেখেছে, ফাঁদ তো দেখেনি। একের পর এক দামি খাবার, পানীয় আসতে শুরু করল টেবিলে। সাগ্নিক প্রথমদিকে পাত্তা দেয়নি। হুঁশ ফিরল যখন, ততক্ষণে সাড়ে সর্বনাশ। বিল দেখে মূর্ছা যাওয়ার জোগাড়।

শিলিগুড়িতে বেশ কয়েকজন তরুণ এমন ফাঁদে পা দিয়েছেন। পাবে বসে একের পর এক দামি মদের ‘পেগ’ অর্ডার দিচ্ছেন তরুণীরা। রীতিমতো একটি চক্র বানিয়ে লোক ঠকানোর কারবার চলছে। অভিযোগ, পানীয়ের সঠিক দাম বলা হচ্ছে না। বিলে টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে পাব কর্তৃপক্ষের থেকে লাভের অংশ নিচ্ছেন তরুণীরা। অন্য বড় শহরে এধরনের ঘটনা ঘটেছে আগে। শিলিগুড়ি অবশ্য খুব একটা পরিচিত নয় বিষয়টির সঙ্গে।

চলতি সপ্তাহে শান্তিনগরের বাসিন্দা পেশায় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ এক তরুণ ব্লাইন্ড ডেটে গিয়ে ২০ হাজার টাকার বিল মেটাতে বাধ্য হয়েছেন। সেই দিনটি এখন তাঁর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। সোশ্যাল মিডিয়াতেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল এক তরুণীর। ক’দিন কথা বলার পর দুজনেই দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। মেয়েটি তরুণকে জানিয়ে দেন, সেবক রোডে দুই মাইলের কাছে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি মলের সামনে অপেক্ষা করবেন তিনি। মলটিতে একাধিক পাব রয়েছে।

সেখানে পৌঁছাতেই তরুণী জানান, তিনি নাকি একটি পাবে ফোন করে অগ্রিম টেবিল বুক করে ফেলেছেন। কোনওরকম আপত্তি না করে তরুণ সঙ্গিনীকে নিয়ে ভেতরে ঢোকেন। একের পর এক পেগ অর্ডার করতে থাকেন মেয়েটি। প্রথমে সব ঠিকঠাক থাকলেও পাবের কর্মীদের সঙ্গে তরুণীর আকার ইঙ্গিতে কথা বলা দেখে তরুণের সন্দেহ হয়। শেষে যখন বিল হাতে আসে, তখন তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। ২০ হাজার টাকা দিয়ে কাঁদো কাঁদো অবস্থা হয়ে পড়ে ছিল। এখন বলছেন, ‘বিলে যা লেখা, সেই দামের মদ আদৌ দেওয়া হয়েছিল কি না, আমার সন্দেহ। নির্ঘাত মেয়েটির স্বার্থ জড়িত। পাবের সবাই ওর চেনাপরিচিত। এটা একটা চক্র।’

শুক্রবার বিকালে একই পাবে গিয়ে সুভাষপল্লির বাসিন্দা বছর তেত্রিশের আরেক তরুণ চক্রের পাল্লায় পড়েন। ডেটিং অ্যাপে তরুণীর সঙ্গে পরিচয়। পেশায় প্লাইউড কোম্পানির সেলস বিভাগের ওই কর্মী এবং তাঁর সঙ্গিনী ঠিক করেন, দেখা করবেন। এক্ষেত্রেও পাবে ফোন করে টেবিল বুক করা হয়েছিল। সেই কথা শুনে প্রথমেই খটকা লাগে তরুণের। তবুও ভেতরে গিয়ে বসেন। অভিযোগ, পাবে ঢোকার পর থেকে ম্যানেজার ও অন্য কর্মীদের সঙ্গে তরুণীর চোখের ইশারায় কথাবার্তা শুরু হয়। তরুণের সন্দেহ আরও বাড়ে। তিনি কিছু বলার আগেই মদের ‘পেগ’ অর্ডার করেন মেয়েটি। তরুণও নিজের জন্য অর্ডার দেন।

তরুণী প্রথম পেগ শেষ করে দ্বিতীয় অর্ডার দেওয়ার সময় দাম শুনে মাথায় হাত পড়ে তরুণের। তিনি নিজে ৪০০ টাকা প্রতি পেগের মদ অর্ডার করেছিলেন, অথচ তরুণীর পেগের দাম ছিল ২৭০০ টাকা। তৃতীয় পেগ অর্ডার দিতেই তরুণ চলে যাওয়ার তাড়া দিতে থাকেন। এদিকে, তরুণী তাঁকে আরও কিছুক্ষণ বসার জন্য জোরাজুরি করতে থাকেন। যদিও কাজ আছে বলে বিল চেয়ে নেন তিনি। ৯০০০ টাকা মিটিয়ে বেরিয়ে যান। সুভাষপল্লির বাসিন্দার দাবি, ‘আমি দেখেছি, ওই মেয়েটি হোয়াটসঅ্যাপে পাবের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলছিল। এই চক্রে পা দিলে সর্বস্বান্ত হতে হবে।’

একইভাবে মাটিগাড়ার একটি পাবে গিয়ে ১৫,০০০ হাজার টাকা বিল মিটিয়েছেন প্রধাননগরের এক তরুণ। তাঁর ফাস্ট ফুডের দোকান রয়েছে। ব্লাইন্ড ডেটের পর থেকে সেই তরুণী যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রতারিত বলছেন, ‘আগে থেকে সবকিছু খোঁজখবর নিয়েই চক্রটি ব্লাইন্ড ডেট প্ল্যান করে। সতর্ক না হলে কিন্তু সর্বনাশ।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *