Birpara | ‘মন্ত্রীর হাসপাতাল’-এ বিক্ষোভ, শোরগোল বীরপাড়াতে

Birpara | ‘মন্ত্রীর হাসপাতাল’-এ বিক্ষোভ, শোরগোল বীরপাড়াতে

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


বীরপাড়া: সোমবার বেলা তখন সাড়ে এগারোটা। হাসপাতালে পরিষেবা চালু করার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ। তবে বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালের আউটডোরে তখনও কোনও বিভাগে ডাক্তার রয়েছেন, কোনও বিভাগে ডাক্তার নেই। এক্স-রে রুমের দরজা খোলেনি। সবচেয়ে বড় কথা, জলাতঙ্কের টিকা (অ্যান্টি র‍্যাবিজ ভ্যাকসিন) মিলছে না ওই রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে। এনিয়ে সোমবার হাসপাতাল গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন ভুক্তভোগীরা। খোদ রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক ওই হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। তা সত্ত্বেও বারবার নানা অব্যবস্থা ও পরিকাঠামোগত সমস্যার জন্য সংবাদের শিরোনামে উঠে আসছে বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতাল।

এই হাসপাতালের ওপর মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের ১৯টি চা বাগান, ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশাপাশি ফালাকাটা ব্লক, জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি এবং বানারহাট ব্লকের একাংশের বাসিন্দারা নির্ভর করেন। এঁদের বেশিরভাগই আর্থিকভাবে অনগ্রসর। বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবা অনেকেই নিতে পারেন না আর্থিক অসংগতির কারণে। তবে বীরপাড়ার সরকারি হাসপাতালেও পরিষেবা পেতে নাজেহাল হতে হচ্ছে, অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সোমবার হাসপাতালের গেটে দাঁড়িয়ে তেলিপাড়ার লতিফ আলি বলেন, ‘কুকুর কামড়ে দেওয়ায় ভ্যাকসিন নিতে এসেছিলাম। দু’ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এখন শোনা গেল ভ্যাকসিন নেই।’ সিংহানিয়া চা বাগান থেকে হাসপাতালে এসেছিলেন সঞ্জয় কামি। বলছিলেন, ‘শনিবার আমাকে কুকুর কামড়ে দেওয়ায় এদিন ভ্যাকসিন নিতে এসেছিলাম। কিন্তু ভ্যাকসিন নিতে মাদারিহাট গ্রামীণ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বীরপাড়া হাসপাতালের কর্মীরা। পরিষেবা পেতে গেলে রাজ্য সাধারণ হাসপাতাল থেকে গ্রামীণ হাসপাতালে যেতে হবে কেন? এছাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে গেলেই যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়?’

ওই হাসপাতালে এক্স-রে বিশেষ করে ইসিজি পরিষেবা কোনওদিনই সময়মতো শুরু হয় না বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন ভুক্তভোগীরা। সোমবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ জটেশ্বরের পূজন মণ্ডল বলেন, ‘এক্স-রে করাতে এসেছিলাম। দু’ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু এক্স-রে টেকনিসিয়ান আসেননি।’ মণিকা বর্মন নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে এসেছি। সকাল ন’টায় আউটডোরে লাইন দাঁড়াই। সাড়ে এগারোটা পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ ডাক্তারবাবু নেই।’

বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে পরিষেবায় খামতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আউটডোরেও চিকিৎসকদের একাংশ সময়মতো বসেন না বলে মাঝে মাঝেই অভিযোগ শোনা যায়। হাসপাতাল চত্বরে ছড়িয়ে আবর্জনা। এদিন দুপুরবেলা হাসপাতাল সুপার কৌশিক গড়াই নিজের চেম্বারে ছিলেন না। সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি‌।

এদিকে, হাসপাতালের বেহাল পরিষেবা নিয়ে সরব হন দক্ষিণ খয়েরবাড়ির আবদুল্লাহ হক। বলছিলেন, ‘আমার স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তার এক্স-রে করাতে বলেছেন। সকাল ১০টা থেকে এক্স-রে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এক্স-রে চালু হয়নি। এদিকে, ভিজিটিং আওয়ার শেষ হলে আমাকে হাসপাতাল ভবনের বাইরে যেতে হবে। তাহলে আমার স্ত্রীকে এক্স-রে চেম্বারে নিয়ে যাবে কে?’ ফালাকাটার তাসাটি চা বাগানের অজিত ওরাওঁ বলেন, ‘ইসিজি করাতে বেলা দশটায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রায় দু’ঘণ্টা কেটে গেলেও ইসিজি রুমের দরজা খোলেনি।’ অবশ্য এদিন বেলা বারোটা নাগাদ এক্স-রে এবং ইসিজি পরিষেবা শুরু হয়।

২২০ শয্যার ওই হাসপাতালে ৩৭ জন চিকিৎসক ও ৭০ জন নার্স রয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তিনজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। আরও দুজন প্রয়োজন। অ্যানাস্থেটিস্ট প্রয়োজন আরও একজন। আর ৪৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর জায়গায় রয়েছেন মাত্র ৫ জন। কয়েকজন চতুর্থ শ্রেিণর চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মীই ভরসা। তাঁরা নো ওয়ার্ক নো পে চুক্তির ভিত্তিতে দৈনিক ১৫০ টাকা করে পান। অথচ ওই টাকাও বকেয়া দু’বছর ধরে। এব্যাপারে এর আগেও সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন বুলু। পরিষেবার সমস্যা নিয়ে এদিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মন্ত্রী বুলুকে ফোন করা হয়েছিল। তাঁর ফোন থেকে জানানো হয়, ‘স্যর এখন ব্যস্ত রয়েছেন।’

The submit Birpara | ‘মন্ত্রীর হাসপাতাল’-এ বিক্ষোভ, শোরগোল বীরপাড়াতে appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *