রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: আগামী ছয়-সাত মাসের মধ্যে পাহাড়ে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন আসছে বলে মন্তব্য করলেন বিমল গুরুং (Bimal Gurung)। শনিবার মিরিকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি এই মন্তব্য করার পরই রীতিমতো শোরগোল পড়েছে পাহাড়ের রাজনীতিতে। বিমলের এই কথার পেছনে কোন রাজনৈতিক অঙ্ক কাজ করছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
বকেয়া পুজো বোনাসের দাবিতে ফার্স্ট ফ্লাশের চায়ের উৎপাদনে বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতার কথা শোনা গিয়েছে বিমলের মুখে। তাঁর বক্তব্য, ‘এসব হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে প্রত্যেক শ্রমিকেরই বাগানে গিয়ে চা পাতা তোলা উচিত।’
গত লোকসভা ভোটে বিজেপিকে সমর্থন করলেও পরবর্তীতে বিমল ফের পাহাড়ের শাসক এবং রাজ্য সরকারপন্থী অবস্থান নিয়েছেন। তিনি নিজেকে পুনরায় পাহাড়ে প্রাসঙ্গিক করতে তুলতে কালিম্পং থেকে মিরিক, পানিঘাটা ছুটে বেড়াচ্ছেন। পাহাড়ের শাসকদল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার (বিজিপিএম) মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মা বলেছেন, ‘উনি আবার মূল ময়দানে ফিরে আসবেন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু ওঁর কাছে বর্তমানে কোনও ইস্যু নেই। তাই চা বাগানে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন। আগামীতে কী হয় দেখা যাবে।’
২০০৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাহাড়ে শেষকথা ছিলেন মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং। কিন্তু বিনয় তামাং এবং অনীত থাপা বিমলকে সরিয়ে পাহাড়ের রাজনীতির রাশ হাতে নেওয়ার পর থেকেই পাহাড়ে পটপরিবর্তন হয়েছে। কয়েকশো জামিন অযোগ্য ধারায় মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে থাকা বিমল ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে পাহাড়ে ফিরেছেন। কিন্তু হারানো মাটি আর ফিরে পাননি। তাঁর দলীয় সংগঠনও এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হয়েছে যে দলকে আর প্রাসঙ্গিক করতে পারছেন না মোর্চা প্রধান।
গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে ফের বিজেপিকেই সমর্থন দেন বিমল। এরপর থেকে কয়েকমাস চুপচাপই ছিলেন মোর্চা প্রধান। কিন্তু কিছুদিন ধরে তিনি আবার পাহাড় চষে বেড়ানোর কাজ শুরু করেছেন। দার্জিলিং, কালিম্পং সফর করে শুক্রবার থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিকে নিয়ে মিরিক মহকুমার বিভিন্ন চা বাগানে ঘুরছেন বিমল।
শনিবার পানিঘাটা চা বাগান এবং নিরপানি এলাকায় যান তাঁরা। ২০১৫ সাল থেকে বন্ধ হয়ে থাকা পানিঘাটা চা বাগান পুনরায় চালু করার দাবিতে প্রায় তিন মাস ধরে সেখানে রিলে অনশন করছেন শ্রমিকরা। সেই মঞ্চে গিয়ে অনশন তুলে নেওয়ার আবেদন করেন বিমল। নিরপানিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ছয়-সাত মাসের মধ্যে পাহাড়ে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন হবে। কিন্তু কী সেই পরিবর্তন তার কোনও ইঙ্গিত দেননি মোর্চা প্রধান। তিনি বলেছেন, কেউ কেউ বোনাস নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চা পাতা তুলতে বারণ করছেন। কিন্তু আমি বলব, সবাই বাগানে গিয়ে পাতা তুলুন। প্রতিদিন কাজ করুন।’
বিমলের এই অবস্থানকে স্বাগত জানাচ্ছেন রাজ্য সরকারপন্থীরা। বিজিপিএম নেতাদের বক্তব্য, ‘বিমল ভালো বার্তাই দিচ্ছেন। তাতে কাজ হলে ভালো।’