পাটনা: আধার কার্ড নেই? জন্ম শংসাপত্র, র্যাশন কার্ড, স্কুলের মার্কশিট, কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না? কোনও চিন্তা নেই! বিহারে এখন ভোট দেওয়ার জন্য নিজের ‘বংশলতিকা’ বা পারিবারিক তালিকা জমা দিলেই কেল্লা ফতে। অবাক হচ্ছেন? কিন্তু এটাই এখন সত্যি। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত ১১টি নথির বাইরে এক ‘বেসরকারি’ ১২তম নথি হিসেবে এই পারিবারিক তালিকা বা ‘পারিবারিক সূচি’ এখন ভোটারদের ত্রাতা হিসেবে কাজ করছে।
২৫ জুলাই বিহারে (Bihar) ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রথম দফার শেষে দেখা যায়, রাজ্যের মাত্র ১৫-২০ শতাংশ যোগ্য ভোটার নিজেদের পরিচয় প্রমাণ করতে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ১১টি নথি জমা দিতে পেরেছেন। বেশিরভাগ মানুষের কাছেই জন্ম বা শিক্ষা সংক্রান্ত জরুরি কাগজপত্র নেই। এই সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্যের ৩৮টি জেলার নির্বাচনি কর্মকর্তারা একটি নতুন পথ খুঁজে বের করেছেন- ‘পারিবারিক সূচি’ বা ফ্যামিলি ট্রি।
মুজাফফরপুরের একজন বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) জানান, জেলাস্তরের বৈঠকে তাঁদের বলা হয়েছে, যেসব ভোটারের কাছে প্রয়োজনীয় নথি নেই, তাঁরা ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় থাকা তাঁদের বাবা-মা বা দাদু-দিদার নামের সঙ্গে নিজেদের নাম যুক্ত করে একটি পারিবারিক তালিকা তৈরি করতে পারেন। এই কৌশল ব্যবহারের ফলে মাত্র পাঁচদিনের মধ্যে নথিপত্র জমা দেওয়ার হার ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৬ শতাংশে পৌঁছেছে। বিশেষ করে যাঁরা অক্ষরজ্ঞানহীন বা কম পড়াশোনা করেছেন, তাঁদের জন্য এটি দারুণ কাজ করছে।
এই নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী, যদি কোনও আবেদনকারীর নাম ২০০৩ সালের তালিকায় না থাকে এবং তাঁর কাছে অন্য কোনও বৈধ নথি না থাকে, তবে তিনি ২০০৩ সালের তালিকায় থাকা তাঁর কোনও নিকটাত্মীয় (যেমন দাদু-দিদা বা চাচা) এবং তাঁদের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনিদের নাম উল্লেখ করে একটি তালিকা তৈরি করতে পারেন। এই তালিকাটি বিএলও এবং বিএলও সুপারভাইজার স্বাক্ষর করে আপলোড করছেন। যদিও এই পদ্ধতির কোনও লিখিত নির্দেশনা নেই, তবে এটি কাজ করছে বলে বিএলও-রা জানিয়েছেন।
তবে এই পদ্ধতিও পুরোপুরি ঝামেলামুক্ত নয়। পুরোনো ঠিকানায় থাকা আত্মীয়ের ভোটার বুথ নম্বর খুঁজে বের করা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে যেসব নারী বহু বছর আগে তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়িতে এসেছেন, তাঁদের জন্য এই কাজটি আরও জটিল। তাঁরা শ্বশুরবাড়ির দিকের কোনও আত্মীয়ের নামের সঙ্গে নিজেদের নাম যুক্ত করতে পারলেও তা গ্রহণ করা হচ্ছে না, কারণ অনেক সময় কিছু সীমান্ত জেলায় নেপালি নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ ভারতীয় নারীরাও থাকেন, যা পরবর্তীতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এই ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, ‘পারিবারিক সূচি’ পদ্ধতি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।