পরাগ মজুমদার, বহরমপুর: বর্ষা এলেই কান্দির রাজারামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। এই স্কুলে মাথার উপর পাকা ছাদ, শ্রেণিকক্ষে টেবিল, বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড সবই আছে। তবুও বর্ষাকালে একজন পড়ুয়ারও দেখা মেলে না। আসলে বর্ষাকালে তো এটা স্কুল না পুকুর বোঝা দায়! বাধ্য হয়েই খুদেরা স্কুলে আসতে পারে না। শিক্ষকরা অবশ্য দমার পাত্র নন। সমস্যা মোকাবিলায় তাঁরা বিকল্প এক রাস্তা খুঁজে বের করেছেন। তাঁরা ক্লাসরুমকে গ্রামের দুর্গা মন্দিরের দালানে তুলে নিয়ে আসেন। শেষ বছর দশেক বর্ষাকালে গ্রামের দুর্গা মন্দিরের দালানেই খুদেদের ক্লাস চলে।
তবে পড়ুয়ারা স্কুলেই ক্লাস করতে চায়। পড়ুয়া আকাশ দাসের কথায়, ‘স্কুলের বেঞ্চে বসে ক্লাস করতে ইচ্ছে করে। তবে পচা জলের গন্ধ আর সাপের ভয় আছে। দুর্গা মন্দিরে যেদিন ক্লাস হয় তখন আসি। যাতে পরের বছর সব বন্ধু একসঙ্গে স্কুলের বেঞ্চিতে বসে ক্লাস করতে পারি সেজন্য এবার পুজোয় দুর্গা মায়ের কাছে প্রার্থনা করব।’ কান্দির বিডিও শ্রীকুমার ভট্টাচার্য বললেন, ‘স্কুল থেকে জল সেচে অন্যত্র ফেলতে গেলে বাড়তি জমির প্রয়োজন। সেই জমি দিতে গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসছেন না। পাকাপাকিভাবে সমস্যার সমাধান করার সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৬০। স্কুলে দুজন শিক্ষক এবং একজন পার্শ্বশিক্ষক আছেন। এই স্কুলে জল জমার পিছনে দায়ী এর ভৌগোলিক অবস্থান। গ্রামের উঁচু রাস্তা থেকে প্রায় ৪০ মিটার নীচে স্কুলটি অবস্থিত। ফলে গোটা গ্রামের জল এই স্কুলে এসে জমা হয়। নিকাশিনালা না থাকার কারণে এই জল বেরিয়ে যেতে পারে না। শুধু স্কুল চত্বর নয় জল চলে আসে শ্রেণিকক্ষের ভেতরেও। একদিকে যেমন নোংরা জল পেরিয়ে আসতে অনীহা আবার অন্যদিকে সাপ কিংবা অন্য পোকামাকড়ের ভয়ে পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে চায় না। প্রধান শিক্ষক সপ্তমকুমার অধিকারী বলেন, ‘বর্ষায় স্কুলে পচা জল জমে থাকে। সেই সঙ্গে স্কুল চত্বরে নানান ধরনের বিষাক্ত সাপের আনাগোনাও থাকে বর্ষাকালে। তাই আমরা অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে পড়ুয়াদের ১৫-২০ জনের দলে ভাগ করে পঠনপাঠন চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন কারণে রোজ হয়তো দুর্গাদালান ফাঁকা পাওয়া যায় না। তবুও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।’
শিক্ষকদের এই উদ্যোগকে স্থানীয়রা সাধুবাদ জানিয়েছেন। শিক্ষদের এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন দলুই বলেন, ‘দারুণ উদ্যোগ। এই শিক্ষকদের কারণেই গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাটা বন্ধ হয়ে যায়নি। তবে দুর্গাদালানের জায়গাটা যদি একটু বড় হত তাহলে পঠনপাঠনে সুবিধা হত।’