উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময় (Being pregnant)। এই সময় হবু মায়েদের অতি সাবধানে এবং যত্নে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তাই বলে শুয়েবসে থাকতে গিয়ে যে সারাক্ষণ স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে থাকবেন তেমনটা মোটেও ঠিক নয়। গবেষণায় স্বল্প সময়ের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহারের কোনও বিরূপ প্রভাব যেমন প্রমাণিত হয়নি, তেমনই গর্ভাবস্থায় মোবাইল ব্যবহার যে নিরাপদ সেটাও বলা যায় না। লিখেছেন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ ডাঃ চন্দ্রিমা দত্ত।
মোবাইল ফোনের মতো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র থেকে এক ধরনের নন আয়োনাইজিং তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ বের হয়। এটি নিম্নস্তরের শক্তিতরঙ্গ, ফলে মানুষের শরীরে গভীরভাবে অনুপ্রবেশ করতে পারে না। তবে বাহ্যিক অঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কিছুটা থাকে, বিশেষ করে চোখের ওপর। গর্ভের বাচ্চার তেমন মারাত্মক ক্ষতি করে না। এরকম বিকিরণ ল্যাপটপ, টিভি, মাইক্রোওয়েভ, ওয়াইফাই থেকেও বের হয়। কিন্তু আয়োনাইজিং বিকিরণ অর্থাৎ এক্স-রে, সিটি স্ক্যান থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। কারণ, এর থেকে নির্গত বিকিরণ গর্ভস্থ বাচ্চার জন্য ক্ষতিকারক।
গবেষণায় জানা গিয়েছে
গর্ভাবস্থায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক কোনও প্রভাব ফেলে কি না তা জানার জন্য এখনও পর্যন্ত অনেক গবেষণা হয়েছে। যেমন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন। বার্সেলোনায় ২০১৭ সালে ৪০ হাজারের বেশি মা-শিশুর ওপর একটি সমীক্ষা করা হয়। যেসব মা মোবাইল ফোনে বেশি সময় ব্যয় করেছেন, তাঁদের সন্তানদের আচরণগত এবং মানসিক সমস্যা বিশেষ করে হাইপারঅ্যাক্টিভিটি (এডিএইচডি)-র সমস্যা দেখা গিয়েছে।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গ্যাজেট ব্যবহারের প্রভাব
মোবাইল থেকে নির্গত নীল আলোঃ আমাদের চোখের পক্ষে ক্ষতিকারক।
বিকিরণঃ বেশি সময় ব্যবহারে মোবাইল থেকে নির্গত বিকিরণ গর্ভস্থ সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা তৈরি করতে পারে। ফলে পরবর্তীতে সন্তান অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি)-এর সমস্যায় ভুগতে পারে। এতে বাচ্চার আচরণে অতিরিক্ত উত্তেজনা অর্থাৎ অল্পেতেই রেগে যাওয়া বা বিরক্তবোধ করতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাতঃ গর্ভাবস্থায় যেখানে গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন, সেখানে মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারে মায়ের ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে।
মানসিক উদ্বেগঃ হাতে মোবাইল ফোন থাকলে গর্ভবতী মা সবসময় অনলাইনে গর্ভাবস্থার যাবতীয় সমস্যার ব্যাপারে সার্চ করেন, যেমন বমি কেন হচ্ছে, বাচ্চা কেন বারবার নড়ছে না, কী খাব, কী খাব না, কোন পাশ ফিরে শোব ইত্যাদি। ইন্টারনেটে সবসময় সঠিক উত্তর পাওয়া নাও যেতে পারে, উলটে মা উিদ্বগ্ন হয়ে পড়েন, যা গর্ভাবস্থায় মা এবং সন্তান উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক।
তাছাড়া মোবাইলে বেশি সময় দিলে পরিবারে নিজেদের মধ্যে কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয়। তার থেকেও উদ্বেগ, অবসাদ আসে, একাকিত্ব গ্রাস করে। তাছাড়া মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে এবং সারভাইকাল স্পাইনে ব্যথা হতে পারে।
করণীয়
- গর্ভাবস্থায় সারাদিনে দু’ঘণ্টার বেশি সময় মোবাইল, ল্যাপটপে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
- প্রয়োজনে প্রতি ২০ মিনিট অন্তর পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে বিশ্রাম নিন।
- অনেক সময় ধরে পা ঝুলিয়ে বসে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করলে পা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে বিরতি নিয়ে একটু হেঁটে আসুন এবং পা তুলে বসে কাজ করুন।
- পেটের আশপাশে বা পকেটে মোবাইল ফোন রাখবেন না, এতে বিকিরণ সরাসরি গর্ভস্থ শিশু পর্যন্ত পৌঁছানোর সম্ভাবনা থাকে।
- ঘুমানোর সময় মাথার কাছাকাছি ফোন রাখবেন না এবং চার্জ দেবেন না। বিছানা থেকে কিছুটা দূরে ফোন রাখুন, পারলে রাতে সুইচ অফ করে দিন।
- ঘরের মধ্যে ওয়াই-ফাই কানেকশন ডিভাইস থাকলে সেটিও ঘুমানোর সময় বন্ধ রাখুন।
- রাতে শুতে যাওয়ার দু’ঘণ্টা আগে ফোন দেখা বন্ধ করুন।
- ফোনের চার্জ ১৫ শতাংশের নীচে নেমে গেলে আর ব্যবহার করবেন না, পুরো চার্জ দিয়ে তারপর ব্যবহার করুন। কারণ চার্জ কম থাকলে বিকিরণ বেড়ে যায়।
- অন্ধকারে মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না। এতে নির্গত নীল আলো সরাসরি চোখের ক্ষতি করে। মোবাইল ফোনের ব্লু-লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন।
- মোবাইল ফোনের ভলিউম সীমার মধ্যে রাখুন, যাতে রিংটোন বা নোটিফিকেশনের আওয়াজ মনের শান্তি বিঘ্নিত করতে না পারে।
- সবসময় পজিটিভ থাকুন। নোটিফিকেশনের যে নিউজগুলি আমাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সেগুলি বন্ধ করুন। যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ভালো, মনের ওপর পজিটিভ প্রভাব ফেলতে পারে এরকম নিউজ বা ভিডিও দেখুন।
সবশেষে বলি, গ্যাজেট ব্যবহার বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। এখানে দেওয়া পরামর্শগুলি মাথায় রেখে গ্যাজেট ব্যবহার করুন, তাতে আপনার সন্তান গর্ভে নিরাপদে থাকবে।