নৃসিংহপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়, বারবিশা: গুটিকয়েক সংস্কৃতিপ্রেমী আবেগপ্রবণ মানুষের হাত ধরে অসম-বাংলা সীমানার প্রত্যন্ত বারবিশায় (Barobisha) বাংলা কবিতার ব্যান্ড ক্যানেস্তারার পথ চলা শুরু হল। কবিতার এই ব্যান্ড গড়ে তোলার পেছনে রয়েছেন একজন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস ঘোষ। তাঁর মাথায় প্রথম এই বাংলা কবিতার ব্যান্ড গড়ে তোলার ভাবনা আসে। আলোচনা করতেই বিষয়টি বেশ ভালো লেগে যায় বাকিদের। ভাবনাকে বাস্তবরূপ দিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বারবিশা হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পিয়ালি সরকার, আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা কবি শীলা সরকার, যন্ত্র ও কণ্ঠশিল্পী নন্দলাল বিশ্বাস, যন্ত্রশিল্পী স্বরূপ দেবনাথ, কণ্ঠশিল্পী বর্ণালি দাসরা। বাংলা সংস্কৃতিচর্চাকে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সামনে তুলে ধরার কাজ করবে বাংলা কবিতার এই ব্যান্ড।
তবলচি, বাচিকশিল্পী, ঘোষক, কবিতাশিল্পী সহ এলাকার সাংস্কৃতিক মহলে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হিসেবে পরিচিত শুভাশিস ঘোষ। বললেন, ‘যাঁদের নিয়ে এই বাংলা কবিতার ব্যান্ড গড়েছি তাঁরা প্রত্যেকেই শিশুশিক্ষার সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত।’ তাঁর কথায়, শুধু কবিতা আবৃত্তি বা কবিতা পাঠের আসরে লোকজনকে দীর্ঘসময় আটকে রাখা যায় না।
অনেকেই এমন অনুষ্ঠানে দীর্ঘক্ষণ বসে বসে বিরক্ত হন। সেটা অনুভব করেছেন শুভাশিস। পিপিপি মডেলের একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি অবসর সময়ে সংস্কৃতিচর্চা করেন তিনি। ছড়া ও কবিতা ভালোবাসেন। এই ভালোবাসার টানেই ছড়া, কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে আরও মনোজ্ঞ করে তোলার তাগিদেই বাংলা কবিতার ব্যান্ড গড়ার ভাবনা মাথায় এসেছে তাঁর।
এই পথচলায় শুভাশিস একা নন। ‘স্কুলের ব্যস্ততা, পরিবার জীবনের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের পর শুধু কবিতাকে ভালোবেসে এই বাংলা কবিতার ব্যান্ডে যোগ দিয়েছি,’ বললেন বারবিশা হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পিয়ালি সরকার। নেশায় তিনি বাচিকশিল্পীও বটে। আমরা সাধারণত গান বা যন্ত্রসংগীতের সঙ্গে নাচ দেখতে অভ্যস্ত। কবিতার সঙ্গেও কি সেভাবেই জুটি বাঁধা যায়? পিয়ালির জবাব, ‘নাচ আর গানের সম্পর্ক হৃৎপিণ্ড আর রক্তের মতো। একে অপরকে ছাড়া অচল। তেমনই কবিতা ও নৃত্যের সংগতও সর্বজনগ্রাহ্য। কবিতা ও গানের সমন্বয়ে ঠিক একইভাবে অবিস্মরণীয় মুহূর্ত তৈরির তাগিদেই জন্ম আমাদের ব্যান্ড ক্যানেস্তারার।’
সেই ব্যান্ডে রয়েছেন সংগীতশিল্পী বর্ণালি দাস। তাঁর কথায়, ‘ছড়া ও কবিতাকে ভালোবেসে ছন্দ ও সুরের কোলাজ নতুন আঙ্গিকে সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে তুলে ধরাই ক্যানেস্তারার মূল উদ্দেশ্য। সুস্থ সংস্কৃতিচর্চার প্রতি নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের আকৃষ্ট করাও এই বাংলা কবিতার ব্যান্ডের অন্যতম লক্ষ্য।’ তাঁর দাবি, সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে এধরনের চেষ্টা এই তল্লাটে এই প্রথম।
শীলা দাস সরকারের একটা রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। তিনি জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি। পাশাপাশি তিনি একজন কবিও বটে। শীলা বলেছেন, ‘আমাদের চেষ্টায় যেভাবে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল উঠে আসবেন, সেভাবেই আসবেন শামসুর রাহমান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীজাতরাও। আমরা চর্চা করব তসলিমা, মন্দাক্রান্তাদের নিয়েও।’
শুভাশিস থেকে শুরু করে পিয়ালি, সকলেরই আশা, মোবাইলে গেম খেলা আর রিলস দেখা ছেড়ে অল্পবয়সিরা আবার বইমুখী হোক। সুস্থ রুচিবোধ তৈরি হলেই তাঁদের নাকি পরিশ্রম সার্থক।