হিলি: চোরাপথে ভারতে প্রবেশ করে কাটিয়েছেন ৩৫ বছর। আধার, ভোটার থেকে পাসপোর্ট বানিয়েছিলেন সবই। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ছত্তিশগড় পুলিশের অবৈধ অভিবাসী শনাক্তকরণ অভিযান শুরু হতেই নিজদেশে পালাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হলেন বাংলাদেশি দম্পতি। ঘটনার তদন্তে বাংলাদেশি দম্পতিকে জেরা করে ধন্ধে পড়েছে পুলিশ। বুধবার বাংলাদেশি দম্পতিকে বালুরঘাট আদালতে পেশ করে হেপাজতের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। ওই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে হিলি সীমান্তে।
মঙ্গলবার দুপুরে হিলি থানার চকগোপাল বিওপির উন্মুক্ত সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন এক মহিলা। ঘটনাটি ১২৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ন বিএসএফের জওয়ানের নজরে আসতেই ওই মহিলাকে পাকড়াও করে। বিএসএফের জিজ্ঞেসাবাদে ওই মহিলা বাংলাদেশের নাগরিক বলে কবুল করে। অন্য দিকে একই সময়ে পাসপোর্ট ভিসার মাধ্যমে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন পাকড়াও মহিলার স্বামী। ওই মহিলাকে দিয়ে কৌশলে স্বামীকেও আত্মসমর্পণ করায় বিএসএফ। তারপরেই বাংলাদেশি দম্পতি জিজ্ঞাসাবাদ করে হিলি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিএসএফ। ধৃত বাংলাদেশির ব্যক্তির নাম শেখ ইমরান(৫৫) ও মহিলার নাম জাইনাব(৫০)। বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বীরকুৎসা গ্রামের বাসিন্দা।
১৯৯০ সালে ওই দম্পতি চোরাপথে ভারতে অনুপ্রবেশ করে। তারপরে ছত্তিশগড়ের রাইপুর থানা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রাইপুর এলাকায় বসবাস করছিলেন বাংলাদেশি দম্পতি। ছত্তিশগড়ে বসবাসকারী এই দুই বাংলাদেশি পিতৃ পরিচয়েই ভারতীয় আধার, ভোটার, প্যান কার্ড তৈরি করেছিলেন ওই দম্পতি। স্বামী ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করলেও ওই মহিলা তিনবার আবেদন করেও পাসপোর্ট তৈরি করে সমর্থ হয়নি। ওই মহিলার পাসপোর্টের জন্য তৃতীয়বার আবেদন করতেই ছত্তিশগড় পুলিশের নজরে চলে আসেন বলে খবর। এর মধ্যেই ছত্তিশগড় সরকার অবৈধ অভিবাসী শনাক্তকরণ অভিযান শুরু করে। তাতেই ওই দম্পতি গ্রেপ্তারির আশঙ্কায় নিজের দেশে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন বলে জেরায় জানিয়েছে বলে দাবি বিএসএফের।
রাতেই বাংলাদেশি দম্পতিকে হিলি থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। পুলিশ মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করে। জেরায় শায়েরি করে জীবিকানির্বাহ করতেন বলে জানিয়েছে ওই দম্পতি। বাংলাদেশি নাগরিকের ভাষার শায়েরি ছত্তিশগড় রাজ্যে কারা শুনবে, এই প্রশ্নে বিভ্রান্ত তদন্তকারীরা। ঘটনায় ধন্ধে পড়েছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে ওই দম্পতিকে বালুরঘাট আদালতে পেশ করে ৫ দিনের হেপাজতের আবেদন করেছে পুলিশ। ধৃতদের হেপাজতে নিয়ে পুরো ঘটনার কিনারা করতে চাইছে পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার একটি প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, “উন্মুক্ত সীমান্তে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা রুখে দিয়ে এক দম্পতিকে পাকড়াও করে হিলি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় ওই দুই বাংলাদেশি নাগরিকের কাছ থেকে নথি উদ্ধার হয়েছে। ওই দম্পতি দীর্ঘদিন থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে লুকিয়ে ছিল। ছত্তিশগড় পুলিশ অবৈধ অভিবাসী শনাক্তকরণ অভিযান শুরু করতেই বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।”
এপ্রসঙ্গে হিলি থানার আইসি শীর্ষেন্দু দাস বলেন, “বিএসএফ দু’জন বাংলাদেশি নাগরিককে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। প্রাথমিক জেরার পরে হেপাজতের আবেদন জানিয়ে আদালতে পেশ করা হয়েছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে ঘটনাটি উদঘাটন করা হবে।”