উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ শেখ হাসিনার পতনের পর কার্যত রাতারাতি ভেঙনের মুখে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। ভারতের অস্বস্তি, উদ্বেগ বাড়ানোর চেষ্টায় খামতি রাখতে চাইছে না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। চিন, পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে মরিয়া প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এবার আমেরিকার সঙ্গেও কৌশলগত সম্পর্ক বিকাশের পথে এগোতে শুরু করেছে ঢাকা। একাধিক সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে হাজির হয়েছে একটি সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস বিমান। মার্কিন বায়ুসেনার এই দানবীয় বিমানটি সম্ভবত জাপানে অবস্থিত ইয়োকোটা ঘাঁটি থেকে উড়ে এসেছে। ওই বিমানে চড়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে এসেছেন মার্কিন সেনার বিভিন্ন স্তরের অন্তত ১২০ জন কমান্ডো, আধিকারিক এবং বিশেষজ্ঞ।
আমেরিকার বাহিনী ঘাঁটি গেড়েছে স্থানীয় পাঁচতারা হোটেল র্যাডিসনে। হোটেলের ৮৫টি ঘর তাঁদের জন্য বুক করা হয়েছে। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হোটেলের অতিথি তালিকায় একজন মার্কিনির নাম পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামে মার্কিন সেনার উপস্থিতি নিয়ে ঢাকা বা ওয়াশিংটনের তরফে সরকারিভাবে কোনও বিবৃতিও জারি করা হয়নি। বাংলাদেশের একটি প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, সেদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথমহড়ায় অংশ নেবেন আমেরিকার সেনারা। ২০ সেপ্টেম্বর বিদেশি বাহিনীর চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার কথা। ইতিমধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একটি দল বাংলাদেশ বায়ুসেনার পতেঙ্গা বিমানঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন।
৩১ অগাস্ট ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেস (এয়ারবর্ন)-এর এক কমান্ডোর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। টেরেন্স আরভেল জ্যাকসন নামে ওই কমান্ডোর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ওই ঘটনার পর চট্টগ্রামে আমেরিকার সেনাবাহিনীর উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ সেনার সঙ্গে মার্কিন বাহিনী টাইগার লাইটনিং এবং অপারেশন লাইটনিং নামে অন্তত ২টি যৌথমহড়ায় অংশ নিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ, আমেরিকা ও শ্রীলঙ্কার বাহিনী যৌথভাবে প্যাসেফিক অ্যাঞ্জেল ২৫ নামে একটি মহড়া দিয়েছে। আমেরিকা ও বাংলাদেশ সরকারের দাবি, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে নাকি ৭ দিন ধরে চলা এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছিল। যদিও অতীতে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন সেনার মহড়ার নজির নেই বললে চলে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে আমেরিকা ও বাংলাদেশ সেনার মহড়াগুলি হচ্ছে চট্টগ্রাম ও তার আশপাশের এলাকায়। যেটি অবস্থানগতভাবে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং মায়ানমারের খুব কাছে অবস্থিত। ফলে এইসব মহড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। চিন, পাকিস্তান ও আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের এই ত্রিমুখী সম্পর্ক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে এখন সেদিকে নজর রাখছে ভারত।
(বক্স)
বাংলাদেশে মার্কিন গতিবিধি
১) চট্টগ্রামে সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস
২) হাজির ১২০ জন মার্কিন সেনা
৩) স্থানীয় হোটেলের ৮৫টি ঘর বুক
৪) অতিথি তালিকায় নাম নেই কারও
৫) ইউনূস জমানায় বাংলাদেশে ৩ মহড়া মার্কিন সেনার
৬) ঢাকার হোটেলে মার্কিন কমান্ডোর রহস্য মৃত্যু