বক্সিরহাট: যে কোনওভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। একেই যেন ধ্যানজ্ঞান বানিয়ে নিয়েছে বারকোদালি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে কাশিবাড়ি বাজারকে প্লাস্টিকমুক্ত বাজার ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। তাতেই খান্ত থাকেনি তারা। এবার এলাকাতেই প্লাস্টিকের বিকল্প এনে পরিবেশ রক্ষায় ভিন্ন দৃষ্টান্ত গড়ল তারা। গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরে খোলা হল পরিবেশবান্ধব ইকো মার্ট। প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসের পরিবর্তে সেখানে মিলছে মাটির ভাঁড়, সুপারি, শালপাতার প্লেট, কাগজের থালা, বাটি, কাগজের ঠোঙা, কাপড়ের ব্যাগ সহ আরও অনেক কিছু। অর্থাৎ বিয়েবাড়ি হোক কিংবা কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান কোথাও যে আর প্লাস্টিকের ব্যবহার চলবে না সেটা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে। এলাকার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকলে প্রয়োজনমতো স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি করা ওইসব পরিবেশবান্ধব সামগ্রীগুলি কিনছেন ওই ইকো মার্ট থেকে। ব্যাগ ছাড়া যাঁরা বাজারে আসছেন তাঁদের কুড়ি টাকা দিয়ে বাজার সাথী নামে কাপড়ের ব্যাগ কিনতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন স্বল্পমূল্যে ব্যবসায়ীরা সেই পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্র ইকো মার্ট থেকে সংগ্রহ করতে পারছেন তেমনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। পরিবেশ রক্ষায় গ্রাম পঞ্চায়েতের এমন উদ্যোগ সাড়া ফেলে দিয়েছে ব্লকজুড়ে।
আর ওই কাজে সর্বতোভাবে সাহায্য করছেন এলাকাবাসী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুদর্শন রায়। তাঁর কথায়, ‘এলাকাবাসীর সাহায্য ছাড়া আমরা এই কাজ করতে পরাতাম না। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক প্রচার, র্যালি চলছে। ইতিমধ্যে গ্রাম পঞ্চায়তের এক আধিকারিক সচেতনতামূলক একটি গান তৈরি করে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রীর তরফে পুরস্কার পেয়েছেন।’
তুফানগঞ্জ মহকুমার অনেক জায়গায় সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প যখন গতি হারিয়েছে, তখন জেলায় প্রথম প্লাস্টিকমুক্ত বাজারের স্বীকৃতি পেয়েছে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের বারকোদালি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই বাজার। তবে এই সাফল্য একদিনে আসেনি বলে জানিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে রূপশ্রীতে আবেদন করা তরুণী, কেটারিং ও ডেকোরেটার ব্যবসায়ীদের নিয়েও বৈঠক সেরেছে গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। সাধারণত যে কোনও অনুষ্ঠানে মশলার প্যাকেট থেকে শুরু করে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, থালা-বাটি-গ্লাস সহ নানা ধরনের অপচনশীল আবর্জনা থাকে। অনুষ্ঠানের শেষে অনেকেই তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। তাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতি হয় পরিবেশের। তাই রূপশ্রীতে আবেদন করা তরুণীদের বিয়ের সময় আবর্জনা পরিবহণের জন্য ইকো টোটো রাখতে সচেতন করা হচ্ছে। সেইমতো আগ্রহী থাকলে অগ্রিম ৫০০ টাকা বুকিং নেওয়া হয়। এছাড়া বছরভর মেলা, খেলা, নানা ধরনের অনুষ্ঠান, নামকীর্তন অনুষ্ঠান থেকে আবর্জনা পরিবহণের ভ্যানের জন্য প্রতিদিনই বুকিং আসছে বলে গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক অমলপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, ‘জেলা ও ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে ঝিঙ্গাপূর্ণিতে। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে পচনশীল ও অপচনশীল আবর্জনা রাখার জন্য দুটো করে বালতি বিলি করা হয়েছে। প্রতিদিন সকালে টোটো এলাকায় ঘুরে আবর্জনা সংগ্রহ করে তা নিয়ে আসে সেই ইউনিটে। পচনশীল আবর্জনা থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। তা অর্গানিক ভেজিটেবল গার্ডেনে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর প্লাস্টিকের সামগ্রী আলাদা করে চলে যাচ্ছে নাটাবাড়ি এলাকায়। তা রিসাইকল করে গ্রামীণ এলাকার রাস্তা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।’