শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা বাগানে এখন নয়া আতঙ্ক ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট (Bacterial Blight)। ওই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর হেক্টরের পর হেক্টর চা গাছের কচিপাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে সেখান থেকে আর উৎপাদন মিলছে না। রোগ নিয়ন্ত্রণে কোনও রাসায়নিক বা ওষুধও নেই। এর পাশাপাশি রেড রাস্ট ও ফিউসেরিয়াম নামে আরও দু’ধরনের রোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চা বণিকসভা টেরাই ইন্ডিয়ান প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (টিপা)-এর তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। মালিকপক্ষের অন্য সংগঠনগুলিও একই কথা জানাচ্ছে।
টিপা-র চেয়ারম্যান মহেন্দ্র বনসাল বলেন, ‘চা গাছে আগে যে সমস্ত রোগ কালেভদ্রে দেখা যেত, তা এখন সর্বত্র ছেয়ে গিয়েছে। ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট তো দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চা শিল্পের জন্য যেসব অনুমোদিত রাসায়নিক রয়েছে, তা কোনও কাজে আসছে না। নতুন কিছু রাসায়নিক এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায়। আমাদের দাবি, সেগুলি ব্যবহারের জন্য জরুরিভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়া হোক।’
এদিকে, এবারের মে ও জুন মাসে গতবারের থেকে উৎপাদন একধাক্কায় ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে। ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইটিপিএ)-এর ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক রামঅবতার শর্মার বক্তব্য, ‘একদিকে প্রতিটি নিলামে চায়ের দাম নিম্নমুখী, অন্যদিকে উৎপাদন কমছে। আগামীতে কীভাবে এই শিল্প টিকে থাকবে, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।’ পরিস্থিতি যে জটিল, তা মানছেন চা গবেষকরাও। চা গবেষণা সংস্থার (টিআরএ) সদর কার্যালয় অসমের টোকলাই কেন্দ্রের পতঙ্গবিদ ডঃ সোমনাথ রায় বলছেন, ‘হেলোপেলটিস, গ্রিন ফ্লাই, থ্রিপসের মতো শোষক পোকার হামলা এবার লাগামছাড়া। যে কারণে ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইটের মতো রোগ ছড়াচ্ছে। এতে চা গাছের কুঁড়ি শুকিয়ে যায়। দমন করার জন্য প্রয়োজন অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় রাসায়নিক। যা এখনও চা বাগানের জন্য অনুমোদিত নয়। তবে নতুন কিছু রাসায়নিক রয়েছে যেগুলি ব্যবহারে সবুজ সংকেত মিললে সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।’ পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা মেনে নিয়েছেন টিআরএ-র তরাই শাখার অ্যাডভাইজারি অফিসার ডঃ তৃণা মণ্ডলও।