মালদাঃ আবাস প্লাসে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ঘর মেলেনি ঘর। আর ঘরের দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাজির হলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের দুয়ারে নাপিত নিতাই প্রামাণিক। এদিন নিতাইকে দুয়ারে নাপিত লেখা হোর্ডিং হাতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী সভায়। গায়ে হলুদ গেঞ্জিতে বড় বড় করে লাল হরফে লেখা, দুয়ারে নাপিত, দুয়ারে মালিশ। সঙ্গে আবার মোবাইল নাম্বার ছাপানো। তাঁর আবাসের ঘর না পাওয়ার অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছালো কিনা জানা নেই। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া নিতাইয়ের যে ঘরের অত্যন্ত প্রয়োজন তা মেনে নিয়েছেন অনেকেই।
মঙ্গলবার মালদায় সভা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর এই সভাতেই দেখা গেল হরিশ্চন্দ্রপুরের দুয়ারে নাপিত নিতাই প্রামাণিকের। নিতাইয়ের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুরের ভিঙ্গল গ্রামে। এলাকায় তিনি দুয়ারে নাপিত নামেই পরিচিত। কারণটাও অদ্ভুত। তাঁর কোনও স্থায়ী দোকান নেই। সাইকেলই তাঁর ভ্রাম্যমান সেলুন। হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম এমনকি চাঁচল মহকুমার বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি সাইকেল করে মানুষের দুয়ারে গিয়ে চুল দাড়ি কাটেন। সঙ্গে মালিশও করে দেন। তাঁর খদ্দেরের তালিকায় সরকারি উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিক থেকে স্কুল শিক্ষক, চিকিৎসক অনেকেই রয়েছেন। স্থানীয়রা জানান নিতাই প্রামানিক নিম্ন বিত্ত দরিদ্রদের বিনা পয়সায় চুল দাড়ি কেটে দেন।
আর এদিন এই দুয়ারে নাপিত নিতাইয়ের দেখা মিলল মুখ্যমন্ত্রী সভায়। হাতে দুয়ারে নাপিত লেখা হোডিং নিয়ে নিতাই বাবু হাজির মমতার সভাতে। গায়ে হলুদ গেঞ্জিতে বড় বড় করে লাল হরফে লেখা, দুয়ারে নাপিত, দুয়ারে মালিশ। সঙ্গে ছাপানো রয়েছে তাঁর মোবাইল নম্বর।
নিতাইয়ের অভিযোগ, এবছর রাজ্যের আবাস তালিকাতে তাঁর নাম ছিল প্রথম পর্যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর নাম কাটা পড়ে। অভাব অনটনের সংসার তাঁর। তার একটা ঘরের ভীষণ প্রয়োজন। প্রথমে লিস্টে নাম থাকায় ভেবেছিলেন এ বছর ঘর পেয়ে যাবেন। কিন্তু কিভাবে তাঁর নামটা কাটা গিয়েছে কিছুই বুঝতে পারছেন না। তাই অভিযোগ জানাতে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ছুটে এসেছেন। নিতাই বাবুর কথায়, ‘আমি হরিশ্চন্দ্রপুর সহ চাঁচল রতুয়া সামসি প্রভৃতি জাগায় ভ্রাম্যমান সেলুন চালাই। গরিব-দুঃখীদের কাছ থেকে পয়সা নেই না। অথচ আমারই নাম কাটা গেল আবাসের তালিকা থেকে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় এসেছি অভিযোগ জানাতে।’
স্থানীয় শিক্ষক শফিকুল আলম বলেন, ‘নিতাই প্রামাণিক অত্যন্ত দরিদ্র। বাড়িতে বাবা মা আর স্ত্রী মেয়ে রয়েছেন। মানুষের দুয়ারে ঘুরে ঘুরে পরিষেবা দিয়ে কোনও রকমে সংসার চালান। ওর নামটা থাকা উচিত ছিল।’
স্থানীয় ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বর্ষা বসাক বলেন, ‘২৭৫৪ জনের প্রথম তালিকায় নাম ছিল। তবে এ বছর তো সরকারি কর্মীরা সার্ভে করেছেন। দ্বিতীয় তালিকায় নাম আসেনি, হয়তো অযোগ্য বলেই নাম কেটে গেছে।’