শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: নিয়োগ বাতিলের জেরে পড়াশোনা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা আছেই, পাশাপাশি পড়ুয়াদের জন্য যে সমস্ত সরকারি প্রকল্প রয়েছে সেগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রেও সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন স্কুলে (Authorities Colleges)। এর কারণ চাকরি হারানো সহ শিক্ষকদের অনেকেই স্কুলে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের নোডাল টিচারের দায়িত্বে ছিলেন। গ্রুপ সি পদের কিছু শিক্ষাকর্মীও চাকরি খোয়ানোর তালিকায় থাকায় স্কুলগুলির প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই শিক্ষাকর্মীরাও সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছে দিতে নোডাল টিচারদের সহযোগিতা করতেন।
হাই ও হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে যে সমস্ত সরকারি প্রকল্প চলে তার মধ্যে রয়েছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য মিড-ডে মিল, পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বার্ষিক স্টাইপেন্ড প্রদানে ঐক্যশ্রী, ১৩-১৮ বছর বয়সি ছাত্রীদের জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্পের কে-ওয়ান, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেমির তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষাশ্রী, ওই একই শ্রেণির ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের জন্য মেধাশ্রী, নবম-দশম শ্রেণির তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি ও ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের প্রি ম্যাট্রিক স্কলারশিপ, একাদশ শ্রেণি থেকে তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত পড়ুয়াদের পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ, নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের সবুজ সাথী-র সাইকেল, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্মার্টফোন বা ট্যাব কেনার ১০ হাজার টাকা প্রদানে তরুণের স্বপ্নের মতো নানা প্রকল্প।
সমস্যার শিকড় যে কতটা গভীরে পৌঁছাতে পারে সেসবের আঁচ মিলছে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা টিআইসিদের কথাতেই। যেমন নাগরাকাটা হিন্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক লপ্তে ১১ জন শিক্ষক চাকরিহারা হয়েছেন। সেখানকার টিআইসি মনোহর সুরি বলেন, ‘ওঁদের মধ্যে দুজন শিক্ষাশ্রী ও মেধাশ্রী প্রকল্পের নোডাল ছিলেন। এখন সবকিছু নতুন করে ভাবতে হবে। সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে সীমিত সংখ্যক শিক্ষক নিয়ে কীভাবে প্রকল্পগুলির কাজ হবে বুঝে উঠতে পারছি না।’ বানারহাটের বল্কা পরিমল হাইস্কুলে চাকরি চলে যাওয়া ছয়জন শিক্ষকের মধ্যে একজন মিড-ডে মিলের ও একজন ঐক্যশ্রী প্রকল্পের নোডালের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানকার প্রধান শিক্ষক চন্দ্রশেখর প্রসাদ বলছেন, ‘একজন বিটেক ডিগ্রিধারী শিক্ষাকর্মীও চাকরি খুইয়েছেন। অনলাইনের সমস্ত কাজ ওই কর্মীই করতেন। এখন না হয় স্কুলে পরীক্ষা চলছে। পড়াশোনার দিকটি তো আছেই। নতুন আর্থিক বর্ষে সরকারি প্রকল্পের কাজ পুরোদস্তুর চালু হলে এর প্রভাব যে কতটা মারাত্মক, তা পরিষ্কার হবে। দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’ নাথুয়ার আশ্রম টাইপ গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের তিনজন চাকরি হারানো শিক্ষকের মধ্যে একজন ছিলেন ঐক্যশ্রী এবং আরেকজন ছিলেন মিড-ডে মিল ছাড়াও প্রি ও পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপের দায়িত্বে। প্রধান শিক্ষক প্রলয় দে সরকার বলেন, ‘মার্চ মাসের মিড-ডে মিলের হিসেবপত্র কষে শুক্রবার বিল তৈরির কাজটি অগত্যা আমাকেই করতে হল।’
দুরামারি চন্দ্রকান্ত হাইস্কুলে আটজন কাজ হারানো শিক্ষকের মধ্যে একজন কন্যাশ্রী, একজন প্রি ম্যাট্রিক ও পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ ও একজন মিড-ডে মিলের নোডাল টিচার ছিলেন। প্রধান শিক্ষক সজলকান্তি সরকার বলেন, ‘একেই কম শিক্ষক। জোড়াতালি দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে সরকারি প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করার লোক কোথা থেকে মিলবে জানা নেই।’ ডামডিম গজেন্দ্র বিদ্যামন্দিরের পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন। সেখানে যে চার শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে তাঁরা যথাক্রমে মিড-ডে মিল, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী ও ঐক্যশ্রী প্রকল্পের নোডাল ছিলেন। টিআইসি উৎস কর বলেন, ‘জানি না এরপর কী হবে।’ বিন্নাগুড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পারভেজ আলম বলেন, ‘১০ জন শিক্ষক ও একজন শিক্ষাকর্মীকে আর পাচ্ছি না। ওঁরাই সমস্ত প্রকল্পের মূল চালিকা শক্তি ছিলেন।’