রাজু সাহা, শামুকতলা: গত প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar Information) কেরামতি মসজিদের মেলা। এটা কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের উৎসব আর নেই। ওই মেলায় সব ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। গীতা, বাইবেল, কোরান সহ সমস্ত ধর্মগ্রন্থ পাঠ হয়। সেসব নিয়ে আলোচনাও চলে দিনভর। বিশ্বশান্তি এবং সবার মঙ্গলকামনায় মসজিদে মোম জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন সকলে। বহু বছর ধরে ওই মেলা যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনবদ্য ছবি ফুটিয়ে তোলে। এবছর আগামী বুধবার ওই মেলা হবে। তা নিয়ে জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মেলায় যেহেতু লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় তাই নিরাপত্তায় কোনও খামতি রাখা হয় না। এবছরও তার অন্যথা হচ্ছে না। মেলার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তৎপরতা শুরু করেছে শামুকতলা থানার পুলিশ। ভিড় সামলাতে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা থাকবে। স্নিফার ডগ নামিয়ে চলবে তল্লাশি। সামনেই জাতীয় সড়ক। যানজট তৈরি হয়। তা নিয়ন্ত্রণেও প্রচুর পুলিশ নামানো হয়। এতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে হয়রানি কিছুটা কমে।
শামুকতলা থানার ওসি জগদীশ রায় বলেন, ‘মেলার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তিপূর্ণভাবে মেলা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। গোটা মেলাজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি চালানো হবে।’
প্রতিবছর চৈত্র মাসের পাঁচ তারিখ আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের উত্তর মজিদখানা গ্রামের ৩১সি জাতীয় সড়কের পাশে কেরামতি মসজিদ প্রাঙ্গণে সর্বধর্ম মিলনে ওই মেলা জমে ওঠে। একদিনের ওই মেলা ঘিরে এলাকার মানুষের প্রচুর আগ্রহ। মেলায় প্রতিবছর জাতিধর্মনির্বিশেষ হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান সহ সব ধর্মের মানুষ ভেদাভেদ ভুলে একে অপরকে কাছে টেনে নেন। তাই লোকমুখে ওই মেলা মিলনমেলা নামেও পরিচিতি পেয়েছে। সারারাত ধরে চলে ওই মেলা। সেখানে প্রতি বছর প্রায় দুই লক্ষ মানুষের সমাগম হয়।
এক সময় বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ এসে ওই মেলায় অংশ নিতেন। এখন উত্তরবঙ্গ এবং অসমের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ মেলায় শামিল হন বলে জানিয়েছেন মজিদখানা কেরামতি মসজিদ মেলা কমিটির সভাপতি মজিদুল ইসলাম। প্রায় দুশো বছরের পুরোনো ওই মসজিদ। তখন থেকেই চলছে মেলা। স্থানীয় বাসিন্দা অসীম সরকার বলেন, ‘প্রতিবছরই এই মেলায় অংশ নেই। পরিবারের সকলকে নিয়ে এসে মসজিদে মোম জ্বালিয়ে প্রার্থনা করি। সব ধর্মের মানুষ মেলায় শামিল হওয়ায় খুব ভালো লাগে।’
ওই মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ রঞ্জন রহমান বলেন, ‘কেরামতির মসজিদে দুপুরের পর মোম, ধূপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা শুরু করেন সকলে। মানুষের বিশ্বাস ওই মসজিদে গিয়ে কিছু চাইলে তা পূরণ হয়। এই মেলা কোনও ধর্মের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সর্বধর্মের মানুষ এই মেলায় এসে প্রার্থনায় শামিল হন। ধর্মীয় সভায় অংশ নেন।’