রাজু সাহা, শামুকতলা : সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধের ঘটনার খবরাখবর নতুন নয়। ফের এধরনের একটি অপরাধের ঘটনা সামনে এল। সোমবার নিগৃহীতার পরিবারের তরফে অভিযোগ পাওয়ার পর তৎপর হয় শামুকতলা থানার পুলিশ। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শামুকতলা থানা এলাকার বাসিন্দা এক ১৬ বছরের স্কুল পড়ুয়া কিশোরীর সঙ্গে তুফানগঞ্জের বাসিন্দা ১৯ বছরের এক তরুণের আলাপ হয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। এরপর দুজনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। অভিযোগ উঠছে, ওই তরুণ মোবাইলে কিশোরী প্রেমিকার সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তুলে দিনের পর দিন তাকে ব্ল্যাকমেল করছিল। এরপর চাপ দিয়ে ওই কিশোরীকে কোচবিহার শহরের একটি সিনেমা হলে নিয়ে গিয়ে হলের ভিতর প্রেমিক ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তারপরে দুজনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়।
সোমবার কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা শামুকতলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শামুকতলা থানার ওসি বিশ্বজিৎ দে বললেন, ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পকসো এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ধৃতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
শামুকতলার বাসিন্দা ওই কিশোরী এখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রেমিকের কাণ্ডে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত কিশোরী খাওয়াদাওয়া একরকম ছেড়েই দিয়েছে। লজ্জায় স্কুলে যাচ্ছে না। এমনকি বাড়ির বাইরেও পা রাখছে না। শামুকতলার থানার পুলিশ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে নির্যাতিতার কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছে, যাতে তাকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়।
আরও জানা গিয়েছে, প্রেমিকাকে ধর্ষণ এবং ব্ল্যাকমেল করার দায়ে ধৃত তরুণ একজন কলেজ ছাত্র। তার বাবা পেশায় ব্যবসায়ী। তুফানগঞ্জে একটি মুদি দোকান চালান তিনি। এদিন নির্যাতিতা কিশোরীর জামাইবাবু শামুকতলা থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ওই তরুণ প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর শ্যালিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। পরে ছক কষেই কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমার শ্যালিকার সঙ্গে কারও প্রেমের সম্পর্ক আছে, এনিয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘুণাক্ষরেও কিছু জানত না। সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনার পর শ্যালিকার অস্বাভাবিক আচার-আচরণ দেখে পরিবারের সদস্যরা ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোটা ঘটনাটি জানতে পারে।’
মাসখানেক আগে ধর্ষণের ঘটনার পর ওই কিশোরী প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইছিল না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই তরুণ অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। নির্যাতিতা কিশোরীর জামাইবাবুর পাশাপাশি তার বাবাও অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিন অভিযোগ পাওয়ার পর শামুকতলা থানার পুলিশকর্মীরা তুফানগঞ্জের কলেজ পড়ুয়া অভিযুক্ত তরুণের বাড়িতে হানা দেন। সেসময় বাড়িতে ছিল সে। ধৃতের বাবা বললেন, ‘ছেলে এধরনের কাণ্ড ঘটাতে পারে, তা ভাবিনি। দোষ প্রমাণিত হলে ওর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’