অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: বসন্ত একদিকে প্রকৃতিকে অপরূপভাবে সাজিয়ে তুলছে। অন্যদিকে, সেই বসন্তই ভিলেন হয়ে উঠেছে প্রকৃতির জন্য। বসন্তের শুষ্ক আবহাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) বক্সা টাইগার রিজার্ভ এবং জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন এলাকায় আগুন লাগছে। সেই আগুনই বন দপ্তরের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গলের বিভিন্ন গাছপালার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই মারা পড়ছে ছোট জীবজন্তুও। বনের এই বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় তাই সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি বন দপ্তরের।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণ সংরক্ষক নভজিৎ দে বলেন, ‘জঙ্গলে আগুন লাগলে বিশাল ক্ষতি হয়। আগুন নেভানো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় খবরই পাওয়া যায় না। তবে কাউকে আগুন লাগাতে দেখলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, জঙ্গলের ভেতর কারও কাছে দেশলাই কাঠি পাওয়া গেলেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে জানান নভজিৎ।
বন দপ্তর সূত্রে জানা গেল, গত সপ্তাহে হালকা বৃষ্টির জন্য আগুন সেভাবে বাড়েনি। তবে, এই সপ্তাহে বৃষ্টি না হওয়ায় ফের জঙ্গলে আগুন লাগছে। চলতি সপ্তাহে বক্সা টাইগার রিজার্ভের দমনপুর জঙ্গলে আগুন লেগেছিল। এছাড়া, চিলাপাতা এবং জলদাপাড়ার জঙ্গলেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ফাল্গুন, চৈত্র মাসেই মূলত জঙ্গলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এইসময় শুকনো পাতা জঙ্গলে পড়ে থাকে। বিভিন্ন বনবস্তির বাসিন্দারা জঙ্গলে গোরু চরাতে কিংবা কাঠ কুড়োতে গিয়ে বিড়ি, সিগারেট খেয়ে সেসব জঙ্গলেই ফেলে আসেন। সেই থেকে আগুন ধরে যায় শুকনো পাতায়। অনেকে আবার পরিকল্পনা করে জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দেন। সেই আগুনে কোনও গাছের ক্ষতি হলে সেটাকে কাঠ হিসেবে কেটে আনা হয়।
বন দপ্তর এখনও বহু চেষ্টা করেও এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বক্সা টাইগার রিজার্ভের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর (পশ্চিম) হরিকৃষ্ণন পিজে বলেন, ‘জঙ্গলে এইভাবে যেন আগুন না লাগানো হয়, সেজন্য লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে মাইকিং করা হয় বনবস্তিগুলোয়। অনেকেই বিষয়টি বুঝেছেন, সেজন্য এইরকম ঘটনা কিছুটা কমেছে। আমাদের চেষ্টা রয়েছে এই প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ করার।’