আলিপুরদুয়ার: গত প্রায় ১৫ দিন ধরে আলিপুরদুয়ারে মারাত্মক গরম। প্রায় প্রতিদিনই তাপমাত্রা পৌঁছে যাচ্ছে ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলেও তাতে খুব একটা স্বস্তি মিলছে না। হাঁসফাঁস অবস্থা জেলাজুড়েই। তারই মধ্যে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে শিশু বিভাগ ও পোস্ট নেটাল-২ বিভাগের রোগীদের ভোগান্তি চরমে।
শিশু বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, রোগীদের ঠাসা ভিড়। একটা বেডে কোনওমতে দুজন করে বাচ্চা রাখতে হয়েছে। ওয়ার্ডে ফ্যান রয়েছে ঠিকই, তবে তাতে স্বস্তি মিলছে না। অধিকাংশ অভিভাবকের হাতেই হয় হাতপাখা, নাহলে বাজারে চলতি চার্জেবল ফ্যান। কয়েকটা জানলা খোলা থাকলেও সেটা দিয়ে খুব একটা হাওয়া আসছে না।
মাদার ও চাইল্ড কেয়ার ইউনিটের ওপরতলায় রয়েছে পোস্ট নেটাল-২ বিভাগ। প্রসবের পর মা ও শিশুকে সেখানে নিয়ে এসে রাখা হয়। ওই ওয়ার্ডেও গরমে নাজেহাল অবস্থা। তার ওপরে ছাদ রয়েছে। সরাসরি সেখানে সারাদিন রোদ এসে পড়ে। তাতে গরম আরও বাড়ছে।
এদিন হাসপাতালে এই নিয়ে কথা হচ্ছিল বারবিশা এলাকার বাসিন্দা বেচারাম সিংহের সঙ্গে। তাঁর বাচ্চা হাসপাতালে ভর্তি। বেচারাম বলেছিলেন, ‘জ্বর নিয়ে বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। আমার স্ত্রীও বাচ্চার সঙ্গে থাকছে। গরমে সমস্যা হচ্ছে ভীষণ। রাতে ওরা ঘুমাতে পারছে না গরমের জন্য।’ একইরকম কথা শোনা গেল রিংকু বর্মন নামে ঘাগরা এলাকার আরেক বাসিন্দার মুখেও।
হাসপাতালের ওই দুই বিভাগের রোগীদের গরমে নাজেহাল হওয়ার বিষয়টি নজরে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও। গরমের এই কয়েক মাস রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ওই সমস্যা আরও বেশি হয় বলে মত তাঁদের। হাসপাতালের সুপার ডাঃ পরিতোষ মণ্ডলের এই নিয়ে বক্তব্য, ‘ওই দুই ওয়ার্ডে রোগীদের সমস্যা মেটানোর জন্য এসি লাগানো প্রয়োজন। স্বাস্থ্য দপ্তরে ওই বিষয়টি আমরা আগেই জানিয়েছি। অনুমতি এলেই এসি লাগানো যাবে। ভোগান্তি কমবে ওই দুই ওয়ার্ডে।’
এদিকে, রোদের তেজে আলিপুরদুয়ার শহরের পাশাপাশি জেলাজুড়ে ঘরে ঘরে ভাইরাল ফিভারের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বাচ্চারা জ্বরে কাহিল হয়ে পড়ছে। সেইসঙ্গে দেখা দিচ্ছে পেটের সমস্যাও। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে যেমন রোগীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে তেমনই আবার প্রাইভেট চেম্বারগুলোতেও একই ছবি। হাসপাতালের চিকিৎসকের থেকে জানা গেল, বর্তমানে যে রোগীরা আসছেন, তাঁদের বেশিরভাগেরই জ্বরের সমস্যা।
হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কৃশানু সিনহার কথায়, ‘এই সময় বাচ্চাদের জ্বর হচ্ছে খুব। জ্বর হওয়ায় অনেকেই শকে চলে যাচ্ছে। খিঁচুনি হচ্ছে। শুধু প্যারাসিটামল দিয়েই সমস্যা অনেকটা মিটে যাচ্ছে। তবে জ্বর নামতে দু’ থেকে তিনদিন লাগছে।’
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, গরমে অনেক বাচ্চার পেট খারাপও হচ্ছে। এই সমস্যা এড়ানোর জন্য এই সময়টায় সাবধানে থাকতে হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গরমে কম বের হতে হবে, বেশি করে জল খেতে হবে। এছাড়াও এই সময় হালকা খাবার খাওয়াই সবথেকে ভালো ছোটদের ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যের পক্ষে।