মাদারিহাট: মাদারিহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের মুজনাই চা বাগানে শুখা নদীর ধারে বছর দুই আগেই তৈরি হয় কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প। সেই প্রকল্পের গা ঘেঁষেই তৈরি হয়েছে চা সুন্দরীর ঘর। ঘরগুলির চাবি শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়া হলেও তাঁরা সেখানে থাকতে নারাজ। এমনিতেই ওই এলাকাটি ধুমচি ফরেস্টের কাছাকাছি। বন্যজন্তুর হামলার আশঙ্কার পাশাপাশি আবর্জনা ফেলা হবে যে জায়গায় সেখানে চা সুন্দরীর ঘর মেনে নিতে পারছেন না শ্রমিকরা।
লছমি ওরাওঁ নামে একজন শ্রমিকের বক্তব্য, ‘আমরা কি বনের পশু নাকি। যেখানে আবর্জনা ফেলা হবে তার গা ঘেঁষে বানানো ঘরে থাকতে হবে। আমার পরিবার তো দূরের কথা, ওই ঘরে েগারু, ছাগলকেও রাখতে দেব না।’
সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পটি চা সুন্দরী গ্রাম তৈরির অনেক আগেই তৈরি হয়। এখনও সেখানে বর্জ্য পদার্থ ফেলার কাজ শুরু হয়নি। কীভাবে ওই প্রকল্পের গা ঘেঁষে চা সুন্দরীর ঘর তৈরি করা হল তা বুঝতে পারছেন বলে জানালেন মাদারিহাট-বীরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশুকল্যাণ সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সীতা লোহার। তিনি বলেন, ‘ঘর তৈরির পর শ্রমিকদের হাতে চাবি তুলে দেওয়ার সময়ে বিষয়টি জানতে পেরেছি।’
আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক আর বিমলা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প আধুনিক পদ্ধতি তৈরি। চারদিকে সীমানা প্রাচীর করা হবে। ভেতর থেকে কোনও দুর্গন্ধ বের হবে না। যাঁরা পাশের চা সুন্দরী ঘরে থাকবেন তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না।’ জেলা শাসক এমন কথা বললেও ওই এলাকায় চা সুন্দরীর ঘর তৈরির পরিকল্পনা কেন নিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা তা ভেবে পাচ্ছেন না মাদারিহাট ব্লক প্রশাসন। মাদারিহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের কথায়, ‘এই ঘরগুলি তৈরির অনেক আগেই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের কাজ হয়ছে। সব দেখেশুনে কীভাবে ওই প্রকল্পের গা ঘেঁষে চা সুন্দরীর ঘর তৈরি করা হল জানি না। আমরা জেলা ও ব্লক প্রশাসনের কাছে বিষয়টি দেখার জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছি।’
কীভাবে পাশাপাশি ঘর ও বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প তৈরি হল সেবিষয়ে মাথা ঘামাতে চান না শ্রমিকরা। তাঁদের একটাই বক্তব্য, ওই জায়গায় ঘর ও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প একসঙ্গে দুটো রাখা যাবে না। শ্রমিক সোনালি মুন্ডা বলেন, ‘একদিকে হাতি যাতায়াতের রাস্তার উপর করা হয়েছে এই ঘর। তার ওপর পাশে আবর্জনা ফেলা হবে। পরিবারের কেউ ঘরে থাকব না। ওই ঘরে জ্বালানি কাঠ রাখব।’
কল্পনা মুন্ডা নামে আরেক শ্রমিক জানালেন, এমনিতেই ঘরগুলি নড়বড়ে। দরজা-জানলা এখনই ভেঙে পড়ছে। তাঁর বক্তব্য, ‘শুনেছি ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকার ঘর বানানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ঘরগুলি দেখে মনে হয় না যে সেগুলি তৈরিতে তিন লাখ টাকাও খরচ হয়েছে বলে। আমরা কি মানুষ নই নাকি। যেখানে আবর্জনা থাকবে সেখানে আমরাও থাকব? হাতির করিডরের পাশে নিরাপদে থাকতে পারব তো?’