আয়ুষ্মান চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার: গত মাস দেড়েক ধরে আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) শহরের প্যারেড গ্রাউন্ড আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে মোদির সভাকে ঘিরে। মাঠ রক্ষা, রক্ষণাবেক্ষণ, মাঠের সংস্কার থেকে আলোচনা ক্রমশ গড়িয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক দিকে। কিন্তু সেই মাস দেড়েক ধরেই প্যারেড গ্রাউন্ডে আরও একটি কর্মকাণ্ড চলছে, তার খবর রাখেন ক’জন?
প্রতিদিন সন্ধ্যায় মাঠের দক্ষিণ দিকে গেলে চোখে পড়বে কয়েকজন খুদেকে। তারা সকলেই পথশিশু। প্রত্যেকেই বইখাতা নিয়ে ভারী ব্যস্ত। পড়াশোনা করছে। আর বিনাপয়সায় তাদের পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন বিমান সরকার। আলিপুরদুয়ার শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিমান পেশায় বেসরকারি চাকুরে আর নেশায় সমাজকর্মী।
বিকেলের পর প্যারেড গ্রাউন্ড চত্বরে কেউ শরীরচর্চা করেন। কেউ সান্ধ্যভ্রমণ করেন। অনেকে আবার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন। আর এসবের মাঝেই দক্ষিণ দিকে হাইমাস্ট টাওয়ারের তলায় চলছে সেই বিনামূল্যের পাঠশালা। বিমানের এই উদ্যোগ পথচলতিদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। হঠাৎ এমন উদ্যোগ কেন? বিমান জানালেন, অনেকদিন ধরেই ভাবছিলেন যে পথশিশুদের জন্য যদি কিছু করা যায়। কেননা ওদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। কিন্তু ওদের মধ্যেও তো প্রতিভা রয়েছে। তাদের মধ্য থেকেও তো একদিন কেউ আইপিএস, আইএএস বা ডব্লিউবিসিএস অফিসার বা অন্য কিছু হয়ে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া সেইসব খুদে দিনভর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। তাদের দিশা দেখানোর কেউ না থাকলে যে কেউ ভুলপথে চলে যেতে পারে। ‘এইসব ভেবেই মাসখানেক ধরে প্রতিদিন সন্ধেবেলায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা খোলা আকাশের নীচে ওদের পড়াচ্ছি’, বললেন বিমান।
সেই ক্লাসে ওদের অ, আ, ক, খ শেখানো হচ্ছে। অক্ষর পরিচয়ের পাশাপাশি লিখতেও শেখানো হচ্ছে। বানান শেখানো হচ্ছে। ওরা যে একেবারে পড়াশোনা করে না, তা কিন্তু নয়। যেমন বিমানের ছাত্র লক্ষ্মী সরকার ম্যাক উইলিয়াম হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। বলল, ‘স্কুলে পড়ি। কিন্তু এখানে স্যর আমাদের রোজ বিকেলে পড়া বুঝিয়ে দেন। অনেক কিছু শিখতে পারছি।’ প্রথম শ্রেণির ছাত্রী পার্বতী সরকার বড় হয়ে উকিল হওয়ার স্বপ্ন দেখে। বলল, ‘স্যর আমাদের পড়ানোর পাশাপাশি আঁকা শেখান। শরীরচর্চা শেখান। স্কুলে পড়লেও সেখানে তো এত কিছু শিখতে পারি না।’ আর সাড়ে ৩ বছর বয়সি রিয়া সরকার এখনও স্কুলে যায় না। সে প্যারেড গ্রাউন্ডেই অ, আ শিখছে বিমানের কাছে।
কেবল পড়াশোনা নয়, ওদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান বিমান। তাই আঁকা ও গান শেখানোর ভাবনাও রয়েছে। একাজে তাঁকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন দেবমণি সরকার। অদূরভবিষ্যতে সম্ভব হলে তাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থাও করতে চান বিমান। চান, তাঁর পাঠশালায় পড়ুয়ার সংখ্যা আরও বাড়ুক।