ফালাকাটা: নদী থেকে তো বালি, পাথর পাচার হয়ই। এবার ফালাকাটার মুজনাই নদী লাগোয়া রেকর্ডভুক্ত ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি থেকেও অবাধে মাটি লুট হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ফালাকাটার ভুটনিরঘাটের বাসিন্দা দিলীপ অধিকারী বিএলএলআরও’র কাছে এনিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বুধবার তিনি একই অভিযোগ জানান ফালাকাটা থানার পুলিশের কাছেও। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আপাতত একজন বাসিন্দাই অভিযোগ জানিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নদী লাগোয়া এরকম আরও অনেকেরই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি থেকেও মাটি লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ। ভূমি দপ্তর অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে।
নদীর বালি-পাথরের চাহিদা তো সব সময় থাকেই। আবার অনেক সময় কোনও গর্ত বা নীচু জমি ভরাট করতে মাটির চাহিদা বাড়ে। তাই চাহিদা অনুযায়ী এবার নদীর চর এলাকার কারও কারও জমি থেকে ট্র্যাক্টর-ট্রলির মাধ্যমে মাটি লুট হচ্ছে।
ফালাকাটার বিএলএলআরও দোলমা তামাংয়ের কথায়, ‘ওখানে ঠিক নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে না। যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন তাঁর জমি নদীর পাশেই। সেই রেকর্ডভুক্ত জমি থেকেই মাটি তোলা হচ্ছে। তবে রয়্যালটি ছাড়া সেটাও অবৈধ। অভিযোগ পাওয়ার পরেই দপ্তরের টিম ওই এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসেছে। ফের সেখানে নজরদারির টিম যাবে।’
এদিকে অভিযোগকারী দিলীপের বক্তব্য, ‘প্রায়দিনই ভোরবেলা ট্র্যাক্টর-ট্রলিতে করে আমার জমির মাটি কাটা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দু’বিঘা জমির মাটি লুট হয়েছে। জমিটি একেবারেই নদী ঘেঁষে। মাটির সঙ্গে বালিও পাচার হচ্ছে।’
তাই দ্রুত যাতে এই পাচার বন্ধ হয় সেজন্য তিনি গত ৩০ জুন বিএলএলআরও অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন। আর এদিন একই অভিযোগ করেন ফালাকাটা থানায়। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নেমেছে পুলিশও।
ফালাকাটার বাগানবাড়ি, ভুটনিরঘাট, এসএসবি ক্যাম্পের মোড়, পশ্চিম ফালাকাটা, বড়ডোবা হয়ে বইছে মুজনাই নদী। এই নদী থেকে আগেও অনেকবার বালি-পাথর পাচারের অভিযোগ উঠেছিল। তবে যখন প্রশাসন কিছুটা সক্রিয় হয় তখন সাময়িকভাবে পাচার বন্ধ থাকে। প্রশাসনিক নজরদারিতে ঢিলেমি দেখা গেলেই ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে পাচারকারীরা। আর এখন প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে সময়ে রদবদল করেছে দুষ্কৃতীরা। সূত্রের খবর, ভোরবেলায় ভূমি দপ্তরের টিম তো নজরদারির জন্য এলাকায় যেতে পারবে না। আর এলাকার অধিকাংশ মানুষেরও ভোরবেলা ঘুম ভাঙে না। এমন সুযোগেই ভুটনিরঘাট, এসএসবি ক্যাম্পের মোড় সহ আশপাশের কারও কারও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির মাটি লুট হচ্ছে। তবে পাচারকারীদের ভয়ে এতদিন প্রকাশ্যে কেউ অভিযোগ জানাতে সাহস পাননি। এবারই প্রথম এক ব্যক্তি অভিযোগ জানালেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ফালাকাটা ব্লকের কোনও নদীতেই বালি-পাথরের রয়্যালটি নেই। তা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যে বিভিন্ন নদী থেকে বালি-পাথর পাচারের অভিযোগ ওঠে। ক’দিন আগেও কুঞ্জনগরের বুড়িতোর্ষা, বালুরঘাটের চরতোর্ষা, খগেনহাটের কলি নদীর বালি-পাথর পাচারের রমরমা কারবার ছিল। তবে সম্প্রতি বালি-পাথর পাচার রুখতে ভূমি দপ্তর ও পুলিশ যৌথভাবে একাধিক অভিযান চালায়। একের পর এক ট্র্যাক্টর আটকও করা হয়। গত রবিবার কুঞ্জনগর এলাকায় বালি-পাথর তোলার কাজে যুক্ত থাকায় একটি আর্থমুভারকে আটক করে পুলিশ। একই দিনে বংশীধরপুর এলাকা থেকে বালি পাচারের অভিযোগে একটি ট্র্যাক্টর-ট্রলি আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশকে বাধা দেয় স্থানীয় পাচারকারীদের একাংশ। যদিও সেই বাধা অতিক্রম করে ট্র্যাক্টর-ট্রলি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এভাবে এইসব নদীতে বালি-পাথর পাচার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তাই পাচারকারীদের এখন নজর পড়েছে মুজনাই নদীর চর এলাকা ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি।