সমীর দাস, কালচিনি: আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) কালচিনি (Kalchini)-র মতো চা বাগান অধ্যুষিত ব্লকে মানব পাচার অন্যতম বড় সমস্যা। মানব পাচার রুখতে প্রশাসনের কালঘাম ছুটে যায়। সমস্যার সমাধানে একেবারে তৃণমূল স্তরে কাজ করা নানা পেশার লোকজনদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে মানব পাচারের মতো সমস্যাকে চিরতরে বন্ধ করার উদ্যোগ নিল কালচিনি থানার পুলিশ।
চা বাগানে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করেন টোটোচালককরা। এলাকায় নতুন কেউ বাইরে থেকে এলে টোটোচালকদের নজর এড়ানো সম্ভব নয়। আবার বহিরাগত কারও সঙ্গে স্থানীয় কেউ বাসস্ট্যান্ড অথবা রেলস্টেশনে গেলেও সবার আগে নজরে পড়ে টোটোচালকদের। অলিগলিতে টোটোচালকদের অবাধ বিচরণকে কাজে লাগাতে তঁাদের নতুন দায়িত্বে আনা হয়েছে পুলিশের তরফে। অবশ্য শুধু টোটোচালক নন, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশাকর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের এক ছাতার তলায় এনে মানব পাচারে রাশ টানতে চাইছে কালচিনি থানার পুলিশ। বুধবার কালচিনি থানা চত্বরে নতুন করে একটি সমন্বয়ক দল গঠন করা হয় পুলিশের তরফে। বিভিন্ন পেশায় যুক্তদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন পেশার মানুষকে যুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, কোথাও মানব পাচারের আভাস পাওয়ামাত্রই ওই গ্রুপে জানাতে হবে। একইভাবে মাদক পাচারের খবর পেলেও ওই গ্রুপের সদস্যদের পুলিশকে জানাতে হবে।কালচিনির এক টোটোচালক সন্তোষ কুমার বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব পেলাম। সন্দেহজনক কিছু নজরে পড়লেই এখন থেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করব।’
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কৃপার সম্পাদক কমল কুজুর মনে করেন, এই ধরনের উদ্যোগ চা বলয়ে মানব পাচার রোধে অনেকটাই কাজে লাগবে। কালচিনি থানার ওসি অমিত শর্মা বলেন, ‘সর্বস্তরের মানুষ, যাঁদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি, তাঁদের নিয়ে নতুন টিম গঠন করে মানব পাচার একেবারে বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিন সব ধরনের পেশায় যুক্তদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে।’
কালচিনি ব্লকে এর আগে একাধিক নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর ও কিশোরীকে ভিনরাজ্যে পাচার করা হয়েছিল। কাশ্মীর, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, দক্ষিণ ভারত সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অনেককেই উদ্ধার করেছে পুলিশ। আবার পাচার হওয়ার পর আর বাড়ির মুখে দেখেননি এমন উদাহরণও রয়েছে। অভিযোগ চা বাগানের কিছু দালাল পাচারচক্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকায় ভিনরাজ্যের দালালদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে মানব পাচার ক্রমশ চলছেই। এবারে ওই পাচারকারীদের শিক্ষা দিতে পুলিশ এমন উদ্যোগ নিয়েছে।