সমীর দাস, হাসিমারা: আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) হাসিমারা (Hasimara)-কে করিডর হিসেবে ব্যবহার করে ইন্দো-ভুটান সীমান্ত লাগোয়া জয়গাঁ শহর হয়ে মাদক পাচারের রমরমা কারবার চলছে। মাদকের ক্যারিয়ার হিসেবে কখনও মহিলা, কখনও অল্পবয়সিদের ব্যবহার করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। এবার কারবারিরা পুলিশের চোখে ধুলো দিতে কাজে লাগাচ্ছে ভিক্ষাজীবী ও ভবঘুরেদের। সম্প্রতি নিউ হাসিমারায় হাসিমারা রেলস্টেশন সংলগ্ন ঝুপড়িপট্টি থেকে সাফালা বিবি নামের এক মধ্যবয়সি মহিলাকে ব্রাউন সুগার সহ গ্রেপ্তার করেছে হাসিমারা ফাঁড়ির পুলিশ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃত ওই মহিলা জয়গাঁয় ভিক্ষা করে বেড়াতেন। সম্ভবত সেই সুবাদেই মাদক কারবারিদের নজরে পড়ে যান ওই মহিলা। মহিলার প্রতিবেশীরা, এমনকি মহিলা যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন সেই বাড়ির মালকিনও বলছেন, তিনি তো ভিক্ষা করেন বলেই এলাকার সকলে জানতেন। তলে তলে যে মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত, কেউ ভাবতেই পারেনি।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ মনে করছে, অতিরিক্ত উপার্জনের টোপ দিয়ে ওই মহিলাকে মাদক কারবারে যুক্ত করেছে মাদকচক্রের বড় মাথারা। ওই মহিলা ধরা পড়ার পর পুলিশও এখন সজাগ হয়েছে। ভিক্ষাজীবী ও ভবঘুরেদের ওপর বিশেষ নজর রাখা শুরু করেছে।
এদিকে, ওই মহিলা এলাকায় মাদকের ফলাও কারবার ফেঁদে বসেছিল বলে খবর। ধৃত মহিলা আদতে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার বাসিন্দা। তবে দীর্ঘ বছর ধরে নিউ হাসিমারার ঝুপড়িপট্টির একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সেই মহিলার মেয়ে বিবাহসূত্রে বীরভূমের রামপুরহাটে বসবাস করেন। সম্প্রতি ধৃত মহিলা রামপুরহাটে মেয়েকে পৌঁছাতে গিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের অনুমান, ফেরার পথে সম্ভবত মালদা অথবা শিলিগুড়ির কোনও ড্রাগ মাফিয়ার কাছ থেকে ব্রাউন সুগার সংগ্রহ করেছিলেন ওই মহিলা।
রামপুরহাট থেকে গত সপ্তাহের মাঝামাঝি প্রথমে কোচবিহার পৌঁছান সাফালা বিবি নামের ওই মহিলা। এরপর বাসে হাসিমারায় ফেরেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে হাসিমারা ফাঁড়ির পুলিশ আগে থেকেই ওঁত পেতে অপেক্ষা করছিল। মহিলা বাড়িতে ঢুকতেই তাঁর হাতে থাকা ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে ১০১ গ্রাম ব্রাউন সুগার বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। হাসিমারা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি সঞ্জীব বর্মন বলেন, ‘ধৃত মহিলাকে আদালতে তুলে ইতিমধ্যেই পাঁচদিনের পুলিশ রিমান্ডে আনা হয়েছে। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে ওই কারবারের মাস্টারমাইন্ডদের নাম ও পরিচয়।’
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, একজন ভিক্ষাজীবী মহিলাকে কেন বেছে নেওয়া হল মাদকের ক্যারিয়ার হিসেবে? প্রথমত, মহিলা বলে পুলিশের সন্দেহ কম হয়। আর দ্বিতীয়ত, ভিক্ষাজীবী হওয়ায় সন্দেহ আরও কম হয়। ভিক্ষাজীবী হওয়ার সুবাদে এলাকায় ঘোরাঘুরির ‘অভিজ্ঞতা’ ছিলই। তাই রাস্তাঘাটও পরিচিত। পুলিশের নজর এড়াতে এখন মাদকের কারবারিরা ভিক্ষাজীবী বা দরিদ্র পরিবারের লোকজনকে ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
কীভাবে চলে এই কারবার? প্রথমে সংশ্লিষ্ট পুরুষ বা মহিলার কাছে মাদক পাঠানো হয়। এরপর পুলিশ নজর রাখছে কি না, সেব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় মাদক পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে সম্পূর্ণ আলোচনা চলে হোয়াটসঅ্যাপ কলের মাধ্যমে। কারণ তার কোনও রেকর্ড রাখা অসুবিধাজনক।
গত ১২ জুলাই নিউ হাসিমারার স্টেশন রোডে জয়গাঁর দুই তরুণকে ব্রাউন সুগার সহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত ৫ মে নিউ হাসিমারার বাসস্ট্যান্ড থেকে মাদক সহ আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সাফালা বিবির সঙ্গে ওই ৩ জনের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মহিলার ফোন বাজেয়াপ্ত করে কললিস্ট চেক করে মাদক পাচারের বড় মাথাদের ধরতে চাইছে পুলিশ।