Alipurduar | মাওলিনং গ্রামের ধাঁচে সাজবে আলিপুরদুয়ারের বক্সা 

Alipurduar | মাওলিনং গ্রামের ধাঁচে সাজবে আলিপুরদুয়ারের বক্সা 

শিক্ষা
Spread the love


ভাস্কর শর্মা, আলিপুরদুয়ার: মাওলিনং। এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া মেঘালয়ের (Meghalaya) গ্রামটিতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা বছরভর ভিড় করেন। ফুলের বাগান দিয়ে সাজানো ছোট্ট গ্রামের রাস্তায় একটা পাতাও পড়ে থাকে না। পূর্ব খাসি পাহাড়ের এই গ্রামের রাস্তা ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করে রাখেন গ্রামের মানুষই। তাঁদের এই সচেতনতাবোধের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। ২০০৩ সালে ‘ডিসকভার ইন্ডিয়া’র তালিকায় স্থান পাওয়া মাওলিনং এখন গোটা দেশের গর্ব।

মাওলিনং পুরোপুরি প্লাস্টিকমুক্ত। ধূমপান নিষিদ্ধ এই গ্রামে। এই গ্রামের ধাঁচেই এবার বক্সা পাহাড়কে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে আলিপুদুয়ার জেলা প্রশাসন। এর জন্য সোমবার থেকেই টানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এদিন থেকেই আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) বক্সা (Buxa)-র সব গ্রামে প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ধূমপান, পিক ফেলা থেকে প্রকাশ্যে পরিবেশ দূষণ ছড়াবে এমন কোনও কাজই আর করা যাবে না বক্সায়। জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগে হাত মিলিয়েছেন স্থানীয়রাই।

আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক আর বিমলার কথায়, ‘সামনেই পর্যটন মরশুম। তার আগেই আমরা বক্সা পাহাড়ের সব গ্রামকে প্লাস্টিকমুক্ত গড়ার ডাক দিয়েছি। এ জন্য ১-৭ সেপ্টেম্বর পাহাড়ের সব গ্রাম থেকে প্লাস্টিক সামগ্রী নামিয়ে আনা হবে। ইচ্ছে আছে, একেবারে মাওলিনংয়ের মতোই বক্সা পাহাড়কে সাজিয়ে তোলার।’

রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সোনম জ্যাংমো ডুকপা বলেন, ‘বক্সা পাহাড়কে প্লাস্টিকমুক্ত করার কাজে আমরাও জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করছি। এ জন্য স্থানীয় বাসিন্দা, গাইড, গাড়িচালক সহ অন্যদের নিয়ে টিম তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা লক্ষ রাখবেন, পর্যটক বা অন্য কেউ যাতে পাহাড়ের রাস্তায় প্লাস্টিক না ফেলেন। পরবর্তীতে আমরা সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রোজেক্ট চালু করে বক্সা থেকে বর্জ্য নিষ্কাশন করব।আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মাওলিনংয়ে প্লাস্টিক ব্যবহার ও ধূমপান নিষিদ্ধ। গ্রামের রাস্তায় কোনও আবর্জনা পড়লে তা তুলে রাস্তার পাশে রাখা বাঁশের ডাস্টবিনে জমা করেন সকলে। গ্রামের সবাই এইসব নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলেন। প্রত্যন্ত মেঘালয়ে পাহাড়ি গ্রাম মাওলিনং যদি পারে, তাহলে বক্সা কেন নয়? এই ভাবনা থেকেই আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন বক্সা পাহাড়কেও প্লাস্টিক ফ্রি করতে চাইছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী রুটম্যাপ বানিয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, রুটম্যাপ মতো সোমবার থেকেই বক্সা পাহাড়ের ১৩টি গ্রামে প্লাস্টিকমুক্ত অভিযান হবে। এই কাজে স্থানীয়দের নিয়ে একাধিক টিম তৈরি করা হয়েছে। এই টিম সোমবার থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বক্সা পাহাড়ের সব গ্রামের আনাচে-কানাচে ঘুরে প্লাস্টিক সংগ্রহ করবে। ওই প্লাস্টিক প্রথমে সান্তালাবাড়িতে নিয়ে আসা হবে। পরে সেখান থেকে প্লাস্টিক চলে যাবে আলিপুরদুয়ার পুরসভার এসডব্লিউএম প্রকল্পে।

প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটক এবং স্থানীয়দের কথা মাথায় রেখে আবর্জনা এবং প্লাস্টিকের বোতল ফেলার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে পরপর বাঁশের তৈরি ডাস্টবিন রাখা থাকবে। সেখানে জমা আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে। প্লাস্টিক সামগ্রী আলাদাভাবে এসডব্লিউএম প্রকল্পে নিয়ে যাওয়া হবে। বাকি আবর্জনা নিয়ে জৈব সার তৈরি হবে। তারপর সেই সার আবার পাহাড়ের কমলা, আদা সহ নানা ধরনের চাষে ব্যবহার করার জন্য বাসিন্দাদের দেওয়া হবে।

প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর জঙ্গল খুলে যাবে। তার আগেই বক্সাকে প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা করা হবে। এজন্য পাহাড়ের রাস্তায় গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় লাগানো হবে পোস্টার। ১৫ তারিখ থেকে কেউ বক্সা পাহাড়ের কোনও গ্রামে প্লাস্টিক ফেললেই জরিমানা করা হবে।

বক্সা ফোর্টের বাসিন্দা ইন্দ্রশংকর থাপার কথায়, ‘জেলা প্রশাসন দারুণ উদ্যোগ নিয়েছে। আমরাও চাই বক্সা পাহাড়ের সব গ্রাম প্লাস্টিকমুক্ত হোক। এই কাজে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমরাও একযোগে কাজ করব। পাহাড়ের স্কুল শিক্ষক তেনডু ডুকপার কথায়, ‘পাহাড়ের যুবসমাজের অনেকেই এখন নেশাতেও আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাই প্লাস্টিকের পাশাপাশি পাহাড়ের যত্রতত্র থুতু ফেলা এবং ধূমপানও নিষিদ্ধ করা উচিত। আমি জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করব প্লাস্টিকের মতো বক্সা পাহাড় নেশামুক্ত করা হোক।’

মাওলিনংয়ের মতো বক্সা পাহাড়ের বাসিন্দারাও এই কর্মসূচিতে শরিক হওয়ায় এখানেও প্লাস্টিকের পর ধূমপানও নিষিদ্ধ হবে বলে আশাবাদী পরিবেশকর্মীরা। বক্সাকে সাজাতে পাহাড়ের রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় বসানো হবে ডাস্টবিন, ফুলের টব, বিশ্রামের জন্য চেয়ার। বক্সা যে প্লাস্টিকমুক্ত তা লিখে স্বাগত গেটও বানাবে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের কথায়, মাওলিনংয়ের মতোই সুন্দর করে গড়ে তোলা হবে বক্সা পাহাড়ের ফোর্ট থেকে লেপচাখাকে।

ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি পার্থসারথি রায় বলেন, ‘প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে আমরা সারাবছর প্রচার চালাই। প্রশাসন আমাদেরও বিষয়টি বলেছে। আমাদের হোমস্টে ও লজগুলিতেও যাতে কেউ প্লাস্টিক ব্যবহার না করেন সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’

বক্সার পর্যটক গাইড জেমস ভুটিয়ার কথায়, ‘কেউ যাতে প্লাস্টিক যত্রতত্র না ফেলেন তা আমরা আগে থেকেই অনুরোধ করে থাকি। এবার প্রশাসনও আমাদের সঙ্গে আছে। এতে বক্সার ভালো হবে। আমরা প্রশাসনিক উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’
ছবি : আয়ুষ্মান চক্রবর্তী।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *