জয়গাঁ: এর আগে ভুটান থেকে কখনও জ্বালানি তেল, কখনও মদ, আবার কখনও সোনার বাট পাচারের কথা শোনা গিয়েছে। এবার ভুটান সীমান্ত পার হয়ে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) জয়গাঁয় (Jaigaon) ‘নয়া আমদানি’ আইফোন (iPhone)। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশি অভিযানে ১০টি নতুন আইফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সবক’টিই কোম্পানির নতুন মডেল আইফোন সিক্সটিন প্রো ম্যাক্স।
আইফোন সিক্সটিন প্রো ম্যাক্স ফোনটির দাম ভারতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। তবে, এই ফোন ভুটানে বিক্রি হয় পৌনে এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি দামে। কারণ ভুটানে আইফোন কিনতে গেলে কোনও কর দিতে হয় না। আর একেবারে জয়গাঁর দোরগোড়ায়, প্রতিবেশী দেশে সস্তায় আইফোন কেনার সুযোগ কি আর ছেড়ে দেয় পাচারকারীরা? তাই সেখান থেকে আইফোনের লেটেস্ট এই মডেলের ফোন পাচার করা হচ্ছে এদেশে। ঢুকছে মূলত জয়গাঁ দিয়েই।
ভুটান থেকে আইফোন নিয়ে এসে এদেশে চোরাপথে বিক্রি করলে পাচারকারীদের মার্জিন কতখানি? পুলিশ সূত্রে জানা গেল, ভুটান থেকে এদেশে পাচারের পর জয়গাঁর বাজারে সেইসব ফোন ১০-২০ হাজার টাকা মার্জিন রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ চোরাই ফোন কিনতে যদি কেউ উৎসাহী হন, তবে তিনি দেড় লক্ষ টাকার ফোন এক লক্ষ টাকারও কম দামে পেয়ে যাবেন সহজেই। জয়গাঁর কয়েকটি দোকানে তো এমন পাচার হয়ে আসা আইফোন বিক্রি হচ্ছে বটেই, সেইসঙ্গে চোরাই ফোন চলে যাচ্ছে শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি বড় শহরে। বিশেষ করে জয়গাঁর সুপার মার্কেট এলাকা এবং সুভাষপল্লি এলাকার জনাকয়েক মোবাইল ব্যবসায়ী এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। সেই অনুযায়ী তদন্তও শুরু করেছে তারা।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভুটান থেকে জয়গাঁয় ঢোকেন এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে ছিল ১০টি আইফোন সিক্সটিন প্রো ম্যাক্স মোবাইল। একটি ব্যাগে করে তিনি মোবাইলগুলি আনছিলেন। পুলিশকর্মীদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তখন তিনি সেই মোবাইলের ব্যাগ ফেলেই চম্পট দেন। পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেনি। ব্যাগ খুলে পায় আইফোন। সেগুলির কোনও নথি ছিল না।
জয়গাঁ থানার ওসি মিংমা শেরপা বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেকদিন আগে থেকেই আইফোন পাচার নিয়ে খবর ছিল। আমরা সতর্ক ছিলাম। মোবাইলগুলি বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছি। লাগাতার আমাদের অভিযান চলবে।’
আইফোন সিক্সটিন প্রো ম্যাক্স-এর চারটে ক্যাটিগোরি রয়েছে-ন্যাচারাল টাইটেনিয়াম, ব্ল্যাক টাইটেনিয়াম, ডেজার্ট টাইটেনিয়াম ও হোয়াইট টাইটেনিয়াম। মোবাইল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এদেশে ৫১২ জিবির যে কোনও টাইটেনিয়াম আইফোনের দাম ১ লক্ষ ৬৪ হাজারের আশপাশে। যদি ২৫৬ জিবির ফোন কেনা হয় তাহলে তার দাম পড়বে প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। মোবাইল দোকান থেকে কিনতে হলে এরসঙ্গে দেওয়া হয় ফোন কেস, স্ক্রিন গার্ড, ওয়ারেন্টি কার্ড। সাগর শা নামের এক মোবাইল ব্যবসায়ী বলেন, ‘আইফোন বৈধ উপায়ে কিনলে ওয়ারেন্টি কার্ড মিলবে, তাও আবার দুটি। একটি মোবাইলের এবং আরেকটি মোবাইল বাক্সের ভেতরে থাকা অ্যাক্সেসরিজের। যদিও সেই ওয়ারেন্টি এক বছরের জন্য থাকে। এক বছরের মধ্যে কোনও সমস্যা হলে কোম্পানি ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু অবৈধ উপায়ে ফোন নিয়ে এনে বিক্রি করলে সেই ওয়ারেন্টি তো মিলবে না, ফোন খারাপ হলে তখন সমস্যা বাড়বে। এছাড়াও ফোন কেস, স্ক্রিন গার্ডও মিলবে না।’
আইফোন চলে আইওএস প্রযুক্তিতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চোরাই ফোন কিনলে তো ঠিকঠাক নথি পাওয়া যাবে না। তাই ফোন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাকাউন্ট খোলাও যাবে না। তারও উপায় বের করে ফেলেছেন ফোন পাচারকারীরা। এইসব চোরাই ফোন ব্যবহার করার জন্য তাঁরা ফেস আইডি’র সুবিধা নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে নথিপত্র ছাড়াও আইফোন ব্যবহার করা যাচ্ছে। অনিকেশ গুপ্তা নামের আরেক মোবাইল ব্যবসায়ী বললেন, ‘ফেস আইডি দিয়ে ফোন চালু করে প্রয়োজনীয় তথ্য দেখালে অ্যাকাউন্ট চালু হয়ে যায়। তখন ডেবিট নাহলে ক্রেডিট কার্ড দেখতে চায়।’ তাঁর কথায়, ‘নিয়ম যেমন রয়েছে, তেমনই আইনের ফাঁকও রয়েছে।’