Alipurduar | ভিক্ষা করে মায়ের মুখে অন্নের জোগান, প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে কর্তব্য

Alipurduar | ভিক্ষা করে মায়ের মুখে অন্নের জোগান, প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে কর্তব্য

শিক্ষা
Spread the love


মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, রাঙ্গালিবাজনা: উচ্চতা টেনেটুনে সাড়ে তিন ফুট। এজন্য পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে পারেন না আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) মাদারিহাটের (Madarihat) ইসলামাবাদ গ্রামের রশিদুল ইসলাম। ৪৩ বছর বয়সি রশিদুল দিনভর গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের কাছে হাত পেতে দু’পয়সা জোগাড় করেন। ওতেই মা ও ছেলের অন্ন জোটে। রেজিয়া বেগমের ৩ ছেলে। রশিদুল ছাড়া বাকি দুজন শক্তসামর্থ্য এবং স্বাভাবিক। তবে তাঁরা নিজেদের সংসার নিয়েই ব্যস্ত। মায়ের ভরসা ছোট্ট চেহারার ছেলেটা। টিনের বেড়ার ছোট্ট একটা ঘরে দিন কাটে মা ও ছেলের। তবে গত বছর প্রকাশিত আবাস যোজনার তালিকায় ঠাঁই পায়নি ওঁদের নাম।

অবশ্য রশিদুল প্রতিবন্ধী ভাতা এবং রেজিয়া বার্ধক্য ভাতা পান। রেজিয়া বলেন, ‘মা ও ছেলে ভাতা হিসেবে মোট হাজার দুই টাকা পাই। ওই টাকায় তো সংসার চলে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। আমার ভরসা ছেলেটা। সারাদিন ঘুরে ঘুরে এর-ওর কাছে হাত পাতে ও।’

একসময় জয়গাঁ পর্যন্ত ভিক্ষে করতে যেতেন রশিদুল। এখন আশপাশের গ্রামগুলিতেই ঘুরে বেড়ান। সম্প্রতি রাঙ্গালিবাজনা চৌপথিতে ভিক্ষে করতে এসেছিলেন রশিদুল। লোকে ভালোবেসে পাঁচ-দশ টাকা দেন। কেউ আবার ৫০-১০০ টাকাও দেন। এভাবেই সারাদিনে যে কয়েকটা টাকা পান তাতেই ভাতকাপড় জোটাতে হয়। এলাকার টোটোচালকদের কেউ কেউ ভালোবেসে ভাড়া নেন না রশিদুলের কাছ থেকে। এতে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পান তিনি। আগে বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিমি দূরে রাঙ্গালিবাজনা চৌপথিতে হেঁটে যেতে হত তাঁকে। এখন টোটোয় চেপে যান তিনি। অনেক সময় কারও মোটরবাইকে সওয়ার হন।

রশিদুলের জন্য নাকি পাত্রীও পাওয়া গিয়েছিল, বলছেন খয়েরবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য সাজু হোসেন। তাঁর কথায়, ‘প্রায় একই উচ্চতার পাত্রী পাওয়া গিয়েছিল। পাত্রীপক্ষ রশিদুলকে পছন্দও করেছিল। কিন্তু শাশুড়ি-বৌমায় ঝগড়াঝাঁটি হতে পারে ভেবে শেষমুহূর্তে বিয়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন রশিদুল। আকারে ছোট হলে কী হবে, তিনি বর্তমান সামাজিক অবস্থায় একটি দৃষ্টান্ত। অনেক শক্তসামর্থ্য ছেলে বাবা-মায়ের প্রতি ন্যূনতম কর্তব্যটুকু পালন করে না। এরকম নালিশ প্রায়ই পাই। কিন্তু রশিদুল তার ব্যতিক্রম।’

রাঙ্গালিবাজনা চৌপথির ব্যবসায়ী বুদ্ধদেব সূত্রধরও রশিদুলের প্রশংসা করে বলেন, ‘বর্তমান সমাজে রশিদুল একটি দৃষ্টান্ত। কারণ, অনেক সচ্ছল, শিক্ষিত ছেলে বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন করেন না। কিন্তু শারীরিক খামতি থাকলেও কর্তব্যে অবিচল রশিদুল।’ অনেক সচ্ছল পরিবার আবাস যোজনা প্রকল্পে ঘর পেলেও রশিদুল না পাওয়ায় প্রশ্ন এলাকায়। এজন্য সাজু অবশ্য দোষ চাপিয়েছেন সমীক্ষকদের ওপর। পাশাপাশি তিনি জানান, ‘দিদিকে বলো’র নির্দিষ্ট নম্বরে রশিদুলের বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার পর আলাদাভাবে সমীক্ষা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই ঘর পাবেন রশিদুল।

আবাস নিয়ে রশিদুল বলেন, ‘আমি বামফ্রন্ট আমলে সুনীল সূত্রধর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য থাকাকালীন ঘর পেয়েছিলাম।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *