ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা: এই প্রথম গাঁজা পাচার করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ল চারজন মহিলা। তাদের সঙ্গে ১২ বছরের এক কিশোরী ও ১৪ বছরের এক কিশোরও ছিল। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) ফালাকাটা (Falakata) শহরের দুলালদোকান এলাকায়। ধৃত চার মহিলা নাজিমা বেওয়া (৬০), মামন সরকার (৩৭), আমিরুল বেওয়া (৩৫) এবং সায়রা বিবি (৪০)। প্রথমজনের বাড়ি বীরভূম জেলায়। বাকি তিনজনের বাড়ি মুর্শিদাবাদে। কোচবিহার থেকে শিলিগুড়িগামী একটি বেসরকারি বাস থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের থেকে কয়েক লক্ষ টাকার গাঁজা উদ্ধার করেছে ফালাকাটা থানার পুলিশ।
ফালাকাটা থানার আইসি সমিত তালুকদার বলেন, ‘গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আমরা দুলালদোকানের দিকে আসা বাসগুলিতে তল্লাশি চালাই। কোচবিহার থেকে শিলিগুড়িগামী একটি বেসরকারি বাসে তল্লাশির সময় চার মহিলার কাছেই ব্যাগ দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। ব্যাগ খুলেই দেখি তাতে গাঁজা। চার মহিলাকেই বাস থেকে নামিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মোট ৪২ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়েছে।’ এদিন আদালতে তুললে বিচারক তাদের সাতদিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
ফালাকাটা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দিনভর দুলালদোকানের দিকে নজর ছিল ফালাকাটা পুলিশের। সন্ধ্যার পর তারা কোচবিহার জেলার ঘোকসাডাঙ্গার দিক থেকে আসা বাসগুলিতে নজরদারি বাড়ান। রাতের দিকে কোচবিহার থেকে একটি বেসরকারি বাস এলে দুলালদোকান মোড়ে সেটিকে দাঁড় করিয়ে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। ওই সময় পুলিশকর্মীরা লক্ষ করেন বাসের পিছনদিকে বসা চার মহিলার কাছে একই ধরনের আটটি বড় ব্যাগ রয়েছে। মহিলারা ভয়ে ভয়ে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিল। পুলিশকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে চার মহিলার ব্যাগ তল্লাশি শুরু করেন। ব্যাগ খুলতেই সবার চোখ কপালে ওঠে। ব্যাগের ভেতর থরে থরে সাজানো গাঁজার বান্ডিল। পরে ব্যাগসমেত ওই চার মহিলাকে বাস থেকে নীচে নামিয়ে আনা হয়। তাদের সঙ্গে অবশ্য দুই নাবালক-নাবালিকাও ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই উদ্ধার হওয়া গাঁজা ওজন করে দেখা যায় তার পরিমাণ ৪২ কেজি ৩০০ গ্রাম। আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা। গাঁজা ২২টি প্যাকেটে ভরা ছিল। রাতেই পুলিশ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে ওই মহিলাদের সঙ্গে থাকা দুই নাবালককে তুলে দেয়। চার মহিলাকে বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার বিশেষ আদালতে তুলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেপাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়। বিচারক সাতদিনের পুলিশ হেপাজতের অনুমতি দেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত চার মহিলার মধ্যে নেত্রী হচ্ছে নাজিমা বেওয়া। ওই গাঁজা প্রথমে শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সেখান থেকে বাস পালটে বহরমপুরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তারা।
পুলিশকর্তাদের ধারণা, এই চার মহিলা ক্যারিয়ার। এদের পিছনে নিশ্চয়ই কোনও বড় মাপের মাথা আছে। সাতদিন জিজ্ঞাসাবাদ করে ধৃতদের থেকে যাবতীয় তথ্য বের করা হবে।
এর আগেও অবশ্য ফালাকাটায় বিভিন্ন সময় গাঁজা উদ্ধার হয়েছে। অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম একসঙ্গে চার মহিলা গাঁজা পাচারকারী গ্রেপ্তার হওয়ায় পুলিশও কিছুটা অবাক। তবে, পুলিশের কাজে খুশি ফালাকাটার বাসিন্দারা।