রাজু সাহা, শামুকতলা: মঙ্গলবার দুপুরে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) শামুকতলা (Samuktala) থানার হলদিবাড়ি মোড় এলাকায় ৩১সি জাতীয় সড়কের ওপর সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছিল এক তরুণ। এদিকে, পুলিশের কাছেও আগে থেকে গোপন সূত্রে খবর ছিল, সেখানে পাচারের ছক কষা হচ্ছে। তারা সেইমতো নাকা চেকিং শুরু করে। সেই তরুণকে দেখে সন্দেহ হয়। তাকে আটকে তল্লাশি চালাতেই চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। মিলল আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ এবং ম্যাগাজিন।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম সইদুল হক। সে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দিনহাটার চৌধুরীহাট এলাকার বাসিন্দা। শামুকতলা থানার পুলিশ এবং শামুকতলা রোড ফাঁড়ির পুলিশের যৌথ অভিযানে এই সাফল্য এসেছে বলে জানা গিয়েছে। এবার প্রশ্ন উঠছে, আলিপুরদুয়ারকে কি তাহলে অস্ত্র, গাঁজা, জাল টাকা এবং মাদক কারবারের নিরাপদ বেস ক্যাম্প করতে চাইছে পাচারকারীরা?
গত ১৫ মার্চ প্রায় ওই একই জায়গা থেকে সাড়ে ১০ কেজি গাঁজা ও ২৫টা ৫০০ টাকার জাল নোট বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। সেবার কোচবিহার জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা সহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার (Arrest) করেছিল শামুকতলা থানার পুলিশ। দেড় মাসের মাথায় ফের একই এলাকা থেকে অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করায় রীতিমতো উদ্বেগ ছড়িয়েছে পুলিশ মহলে।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিম খান সাংবাদিক সম্মেলন করে পুলিশের এই সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শ্রীনিবাস এমপি, শামুকতলা থানার ওসি বিশ্বজিৎ দে, শামুকতলা রোড ফাঁড়ির ওসি দেবাশিসরঞ্জন দেব সহ অন্য পুলিশকর্তারা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, দুপুর ১২টা নাগাদ ওই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে দুটো ইমপ্রোভাইজড ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, চার রাউন্ড কার্তুজ ও চারটি ম্যাগাজিন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করার সঙ্গে মোটর সাইকেলটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
কী উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো আনা হয়েছে? কোনও অপরাধ ঘটানোর ছক ছিল? নাকি বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। তবে প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশকর্তাদের ধারণা, অস্ত্রগুলি হাতবদল করার জন্যই এলাকায় আনা হয়েছিল। আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রগুলো কোথায় তৈরি করা হয়েছে বা কোথা থেকে আনা হয়েছে, সেই বিষয়ে পুলিশ এখনও কোনও সুস্পষ্ট তথ্য পায়নি বলে জানিয়েছে। ধৃতের সঙ্গে আর কারা যুক্ত, সেসব আগ্নেয়াস্ত্র কার কাছে হাতবদল করা হত, সেটা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এই ধরনের অস্ত্র উদ্ধার সাম্প্রতিককালে ঘটেনি। এটা জেলা পুলিশের একটি বড় সাফল্য।’
বিগত কয়েকমাস ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ সামনে এসেছে। গত ৭ এপ্রিল ৩১সি জাতীয় সড়কের চালতাতলা এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পে কর্মীকে গুলি করা হয়। সেই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগে গত বছর মাকড়াপাড়ায় দেশি আগ্নেয়াস্ত্র সহ ১ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল বীরপাড়া থানার পুলিশ। আড়াই বছর আগে কোচবিহারের চিলকিরহাট এলাকার এক বাসিন্দাকে দুটি দেশি পিস্তল এবং ২ রাউন্ড কার্তুজ সহ গ্রেপ্তার করেছিল আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ।