শান্ত বর্মন, জটেশ্বর : চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের নিয়ে সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য সেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারাদেরও স্কুলে এসে ক্লাস নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সহকর্মীকে হারানোর পর ফালাকাটার প্রমোদনগর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানালেন কর্মবিরতি পালন করে। তার ফলে সেই স্কুলের প্রায় ৪০০ পড়ুয়ার পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেল।
বর্তমানে ওই স্কুলে ইউনিট টেস্ট চলছে। এদিন ছিল চতুর্থ পরীক্ষা। স্যরদের প্রতিবাদে এদিন যে তাদের পরীক্ষা দেওয়া হবে না, তা আগে থেকে জানতও না পড়ুয়ারা। স্কুলে আসার পর জানতে পারে যে তাদের পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়ে ১২ এপ্রিল নেওয়া হবে। খালি তাই নয়। এদিন পড়ুয়াদেরও শামিল করা হয় বিক্ষোভে। তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় প্ল্যাকার্ড। স্কুল সংলগ্ন এলাকায় পড়ুয়ারা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায় ঘণ্টা দুয়েক। মাঠে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল আনুফা পারভিন নামের এক পড়ুয়া। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। উত্তরে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি সেই খুদে। কেন যে সেই দুজন স্যর স্কুলে আসছেন না, সেটাও সে ভালো করে জানে না। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া কৌশিক রায় আবার খানিকটা জানে। বিক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে তার জবাব, ‘দুজন স্যর স্কুল থেকে চলে গিয়েছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে বলছি আমরা।’
এভাবে কি পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়ে আন্দোলন করা যায়? এবিষয়ে সাবধানি মন্তব্য করেছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (উচ্চমাধ্যমিক) আশানুল করিম। বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে চাইব। তার আগে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’ আর প্রমোদনগর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সান্যাল বলেন, ‘শিক্ষকরা তাঁদের সহকর্মীদের জন্য পেন ডাউন করেছেন। পরীক্ষা নেওয়ার মতো কেউ ছিল না। আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে পেন ডাউন করিনি। কিন্তু আমার তো করারও কিছু ছিল না। পড়ুয়াদের বাড়িতে চলে যেতে বলেছি।’
চা বাগান ঘেঁষা প্রত্যন্ত এলাকায় রয়েছে এই স্কুলটি। যে দুজনের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের একজন অঙ্কের শিক্ষক। আরেকজন বাংলার। তাঁদের সহকর্মী ও পড়ুয়ারা বলছে, ওই দুই শিক্ষক কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে পঠনপাঠন তো বটেই, সেইসঙ্গে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও এই স্কুলের সুনাম বেড়েছে। জনপ্রিয় সেই দুই শিক্ষকের চাকরি যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না বাকিরা। তাই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে এদিন প্রায় ১৫ জন কর্মবিরতি পালন করেন। স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষক রাজ্জাক হোসেন বলেন, ‘আমরা সব শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলেই পরীক্ষা স্থগিত রেখে কর্মবিরতি কর্মসূচি নিয়েছি।’
তবে এদিনের ঘটনায় অভিভাবক মহল ক্ষুব্ধ। অভিভাবিকা সুষমা রায় বলেন, ‘আমার ছেলে ও মেয়ে ওই স্কুলেই পড়ে। পরীক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে স্কুলে গিয়েছিল। পরীক্ষা না নেওয়া হলে আগে জানানো উচিত ছিল।’ অভিভাবক আমিনুর হোসেনেরও একই কথা। বললেন, ‘বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে পরীক্ষা বন্ধ রেখে এভাবে আন্দোলন করা একেবারেই অনুচিত হয়েছে। আন্দোলনটা শিক্ষক-শিক্ষিকারা অন্যভাবেও করতে পারতেন।’
তবে এদিনের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে উঁচু ক্লাসের কয়েকজন পড়ুয়া। যেমন দশম শ্রেণির পড়ুয়া লিপিকা দাস বলে, ‘স্যররা আমাদের জন্য অনেকটা ত্যাগ স্বীকার করেন। আমরা তাঁদের জন্য এটকু কেন করব না?’