Alipurduar | পরিত্যক্ত গ্রাম, কর্মহীন জনপ্রতিনিধি বিন্দা

Alipurduar | পরিত্যক্ত গ্রাম, কর্মহীন জনপ্রতিনিধি বিন্দা

শিক্ষা
Spread the love


রাজু সাহা, শামুকতলা: ঠিক যেন প্রজাহীন রাজার গল্প। এই গল্পে অবশ্য রাজা নয়, আছেন রানি। তাঁর প্রজারা এখন অন্য রাজ্যের বাসিন্দা। সেই প্রজারা আবার রাজাহীন সাম্রাজ্যে বসবাস করছেন। না, এটা কোনও রাজা-প্রজা বা রাজ্যপাটের গল্প নয়, এ গল্প বাস্তবের এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যার।

তাঁর সংসদ এলাকা অর্থাৎ একটা গোটা গ্রাম এখন ঝোপজঙ্গলে ভরা মাঠ (Alipurduar)। গোটা গ্রামটিকেই অন্য বিধানসভা এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গোটা গ্রাম বা মৌজা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও পঞ্চায়েত সদস্যা হিসাবে তিনি রয়ে গিয়েছেন। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যা হিসাবে তাঁর কোনও কাজই নেই। গ্রাম উন্নয়ন বা রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট, আয়ের সার্টিফিকেট কোনও কিছুই আর দিতে হয় না তাঁকে। গত প্রায় দু’বছর ধরে তিনি শুধু নামেই পঞ্চায়েত সদস্যা।

বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের মধ্যে অবস্থিত কুমারগ্রাম বিধানসভা এলাকার তুরতুরিখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ভুটিয়াবস্তির অস্তিত্ব না থাকায় নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যা বিন্দা ছেত্রী এখন সংসদহীন পঞ্চায়েত সদস্যা।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন বিন্দা। কুমারগ্রাম বিধানসভা এলাকার এক নম্বর বুথ ছিল ভুটিয়াবস্তি। মাত্র ৭৬ জন ভোটার। সেই ভোটাররা সবাই মিলেই বিন্দা ছেত্রীকে তৃণমূলের প্রার্থী করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত সদস্যা নির্বাচিত করেন।

বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের বুনোদের আবাসস্থলের পরিসর বড় করা এবং বাঘ ছাড়ার জন্য কালচিনি ব্লকের ভাটপাড়া চা বাগানের কাছে বনছায়ায় সরকারের দেওয়া জমিতে ভুটিয়াবস্তির ৫১টি পরিবারের ১০৬ জন বাসিন্দাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে বাসস্থান গড়ে তুলছেন তাঁরা। গত লোকসভা নির্বাচনেও তাঁদের কালচিনি থেকে ভুটিয়াবস্তিতে এনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। এখন তাঁরা কালচিনি বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা। তাই তাঁদের কালচিনি ব্লকে ভোটার তালিকায় নাম তোলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেখানে নাম তোলার জন্য তাঁদের সমস্ত কাগজপত্র জমা নেওয়া হয়েছে।

তুরতুরিখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪টি মৌজা ছিল। তার মধ্যে একটি মৌজা সরে যাওয়ায় এখন ১৩টি মৌজা রয়েছে। ১৩ জন পঞ্চায়েত সদস্য সক্রিয় রয়েছেন।  বিন্দা ছেত্রী গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশ নিলেও তাঁর সংসদ এলাকা না থাকায় গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে তাঁর কোনও কাজ থাকে না। তাঁর আক্ষেপ, ভুটিয়াবস্তিতে থাকার সময় গ্রামের রাস্তাঘাট, জলনিকাশি ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করতাম। ছোট্ট গ্রাম হলেও গ্রামবাসীদের নিয়ে খুব আনন্দে আমরা বসবাস করতাম। এখন গ্রামটা অন্যত্র তুলে নিয়ে যাওয়ায় গ্রামের কথা খুব মনে পড়ে। ভোটারদের খুব মিস করি। আগের দিনগুলি ভালো ছিল। ওই ভোটারদের ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে গ্রামের উন্নয়ন এবং মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ দেওয়া হোক, সেটাই চাইছি।’

তুরতুরিখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অঞ্জুলা লাকড়া বলেন, ‘আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এক নম্বর বুথ এলাকাকে পুরোপুরি অন্য বিধানসভা এলাকায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে সেটা হয়েছে। তাই ওই এলাকার নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য এখন ভোটারবিহীন বা সংসদ এলাকাবিহীন হিসেবে রয়েছেন। তাই তাঁর এখন কোনও এলাকা নেই। ভোটার না থাকায় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে তাঁর প্রশাসনিক কাজকর্মও নেই। কিন্তু আমরা সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের মিটিংয়ে তাঁকে চিঠি দিয়ে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানাই।’

ভুটিয়াবস্তি এলাকার বাসিন্দা, বর্তমানে বনছায়াবস্তির বাসিন্দা প্রমোদ থাপা বলেন, ‘আগের গ্রামের কথা খুব মনে পড়ে। আমাদের পঞ্চায়েত সদস্য থাকলেও আমরা এখন অন্যত্র সরে এসেছি। এখানেও আমাদের কোনও পঞ্চায়েত প্রতিনিধি নেই। কালচিনি ব্লকে আমাদের ভোটের নাম তোলা হচ্ছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থাকলেও তিনি আমাদের জন্য কোনও কাজ করতে পারছেন না।’

বুদ্ধিমায়া মাঝি নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের পঞ্চায়েত সদস্য খুব ভালো কাজ করছিলেন। কিন্তু সব যেন ওলট-পালট হয়ে গেল। আগের গ্রাম এবং পঞ্চায়েত সদস্যার কথা খুব মনে পড়ে।’

The put up Alipurduar | পরিত্যক্ত গ্রাম, কর্মহীন জনপ্রতিনিধি বিন্দা appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *