অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার, ২৯ জুলাই : ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জঙ্গলে প্রবেশ নিষেধ। আর সব বনাঞ্চলের মতোই আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার বক্সা টাইগার রিজার্ভে (Buxa Tiger Reserve) প্রবেশের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম জারি থাকে। অথচ সেই নিয়মের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই বক্সার বাঘবনের ভেতর নিয়ে জয়ন্তীর মহাকাল মন্দিরে (Mahakal Temple) যাচ্ছেন ভক্তরা। যাচ্ছেন শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় জল ঢেলে পুণ্য অর্জনের কামনায়। শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলিতে যেহেতু শিবের মাথায় জল ঢালার আকাঙ্ক্ষা থাকে বেশি, তাই মহাকালধামেও রবিবার করেই ভিড় হচ্ছে বেশি।
প্রশ্ন হল, কোনওরকম নিরাপত্তা ছাড়াই কী করে পুণ্যার্থীরা যাচ্ছেন? আর বন দপ্তরের নজরদারিই বা নেই কেন? পুণ্যার্থীদের তো বক্সা বাঘবনের রাজাভাতখাওয়া গেটেই আটকে দেওয়ার কথা। মহাকালধামে যেতে হলে জয়ন্তী নদীর খাত দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এবছর বর্ষাকালে তেমন বৃষ্টি হয়নি। এখন নদীতে জল কম থাকলেও হড়পার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভুটান পাহাড়ে ভারী বৃষ্টি হলেই চোখের নিমেষে হুহু করে জলস্রোত চলে আসবে। তখন যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে কে দায়ী হবে?
বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে সোমবার রাত থেকে। অসমের ৭০ জন পুণ্যার্থীর একটি দল বন দপ্তরের সবরকম নজরদারি এড়িয়ে, জয়ন্তীর নদীখাত পেরিয়ে মহাকালধামে গিয়েছেন। তাঁদের যাওয়ার সময় কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। আটকানো হয় ফেরার সময়। তারপরই হইচই শুরু হয়। রাতে তাঁদের আটক করেন বনকর্মীরা।
রাতেই ঘটনার খবর পেয়ে জয়ন্তী পৌঁছে যান কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামা (Bishal Llama)। তিনি বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে (Birbaha Hansda) ফোন করে বিষয়টি জানান। মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ অসমের ওই পুণ্যার্থীদের ছাড়া হয়। মঙ্গলবার ভোরে ওই পুণ্যার্থীরা বাড়ি পৌঁছান। প্রশ্ন হল, যাওয়ার সময় যদি আটকানো না হয়, তাহলে ফেরার সময় আটকানো হল কেন? এদিন বিষয়টি জানতে চেয়ে বক্সা টাইগার রিজার্ভের ক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেনকে ফোন করা হলেও তাঁর উত্তর পাওয়া যায়নি। আর জয়ন্তীর রেঞ্জ অফিসার সুদীপ দে বলেন, ‘জঙ্গলে প্রবেশ এখন বন্ধ। মহাকালধামে যাওয়া নিষিদ্ধ। রাতে যাদের আটক করা হয়, তাদের রাজভাতখাওয়া যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে কী হয়েছে, জানা নেই।’
বনকর্মীরা জানিয়েছিলেন, নিয়ম ভেঙে জঙ্গলে প্রবেশের জন্য ওই পুণ্যার্থীদের জরিমানা করা হবে। তবে পরে সেই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়। বনকর্মীরা বলছেন, বক্সা টাইগার রিজার্ভের ২৩ মাইল এলাকায় একটি শিব মন্দির রয়েছে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারাও পুজো করেন। অসমের ওই পুণ্যার্থীরা নাকি সেই মন্দিরে যাওয়ার কথা বলে রাজাভাতখাওয়া গেট পার হন। তবে ওই মন্দিরও তো জঙ্গলের সীমানার মধ্যেই পড়ে। সেখানেই বা তাঁদের যেতে দেওয়া হল কেন?
জয়ন্তীর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অসমের ওই পুণ্যার্থীদের সেখানে যাওয়াটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত সোমবারেও নাকি মহাকালধামে একাধিক পুণ্যার্থী গিয়েছেন। কেউ আবার রাতেই জয়ন্তী পৌঁছে গিয়ে কোনও লজ বা হোম স্টেতে গিয়ে উঠছেন। কেউ অটো ভাড়া করে জয়ন্তী চলে যাচ্ছেন। কেউ যাচ্ছেন সরকারি বাসে। তাহলে নজরদারি কোথায়?
ফাল্গুন মাসে শিবরাত্রির সময় জয়ন্তীর মহাকালধামে লক্ষাধিক লোকের ভিড় হয়। সেই সময় প্রশাসনের ব্যাপক নজরদারি থাকে। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের সঙ্গে ভুটান পুলিশও থাকে। প্রচুর দোকান ও ভাণ্ডারা বসে। তবে বর্ষায় তো জঙ্গল বন্ধ থাকার কথা। তাই মহাকালধামে এখন সেসব কিছুই নেই। কোনও পুণ্যার্থী পুজো দিতে গিয়ে আটকে গেলে, সেই খবর পাওয়াও মুশকিল হবে বন দপ্তরের পক্ষে।