রাজু সাহা, শামুকতলা: দামি মোবাইল ফোন, ভালো ভালো জামাকাপড় এবং অনেক টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল কাকু-কাকিমা। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ট্রেনে চেপে কাকু-কাকিমার সঙ্গেই দিল্লি রওনা দিয়েছিল ১৬ বছরের ছোট্ট মেয়েটি। দিল্লিতে পৌঁছে বড় বড় বাড়ি, ঝকঝকে জীবন দেখে খুশি হয়েছিল সে। কিন্তু তারপর যা ঘটল, তা তার স্বপ্নের সঙ্গে কিছুই মিলল না। দিল্লির একটি বাড়িতে গত ১৬ মাস রীতিমতো বন্দিদশায় কেটেছে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) শামুকতলার সেই কিশোরীর। পুলিশের হাত ধরে উদ্ধার পাওয়ার পর তার মনে হচ্ছে, যেন জেলখানা থেকে বের হল।
শামুকতলা থানা এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামের নবম শ্রেণির সেই ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে দিল্লিতে (Delhi) পাচার করে দিয়েছিল তার নিজের কাকু-কাকিমা। শামুকতলা থানার পুলিশ অভিযোগ পেয়ে দিল্লি থেকে গত মঙ্গলবার তাকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। গ্রেপ্তার করেছে তার কাকু-কাকিমাকে। এতদিন পর সন্ধ্যায় মায়ের কোল পেয়ে রীতিমতো হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে মেয়েটি। মা-বাবার চোখ থেকেও টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছিল।
মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতেই জানাল, গত ১৬ মাস কীভাবে জীবন কাটিয়েছে সে। তার কাকু-কাকিমা একটি প্লেসমেন্ট অফিসে নিয়ে গিয়েছিল তাকে। তারপর সেখানেই রেখে দিয়ে চলে যায়। মেয়েটি বলে, ‘সেই অফিস থেকেই আমাকে একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে বলা হয়। সেখানে আমাকে দিয়ে বাড়ির সমস্ত কাজ করানো হত। আমাকে কোনও ফোন দেওয়া হত না। বাড়ির মালিককে অনেকবার বলেছি যাতে আমাকে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। কোনও লাভ হয়নি।’
বাইরে বের হওয়া মানা ছিল তার। বাড়ির গেট সবসময় বন্ধ করে রাখা হত। সে শুধু চোখের জল ফেলত। তার কাকু বলেছিল, যদি সে পড়াশোনা করতে চায়, তাহলে দিল্লিতে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। ‘আমি পড়তে চাই’, বাড়ির মালিককে বলেছিল সেই কিশোরী। তার সেই অনুরোধ সাফ নাকচ করে দেওয়া হয়।
মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমরা মেয়েটিকে পড়াশোনা করানোর জন্য বাড়িতে রেখে বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার নিজের ভাই এবং ভাই বৌ এমন সর্বনাশ করবে, তা আমি ভাবতেও পারিনি। ওর পড়াশোনা দু’বছর পিছিয়ে গেল। মেয়েটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।’
আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরই তাকে চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটির কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের নির্দেশেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। সমাজকর্মী অসিত শিকদার জানালেন, ডুয়ার্সের প্রত্যন্ত গ্রাম এবং চা বাগানের কমবয়সি মেয়েদের নানা কায়দায় ভিনরাজ্যে পাচার করে দেওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। এই ক্ষেত্রে শামুকতলা থানার পুলিশের তৎপরতা এবং সঠিক পদক্ষেপের ফলে মেয়েটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।