Alipurduar | দিনক্ষণ দেখে গাছ লাগান জ্ঞানেন্দ্র

Alipurduar | দিনক্ষণ দেখে গাছ লাগান জ্ঞানেন্দ্র

ভিডিও/VIDEO
Spread the love


সুভাষ বর্মন, পলাশবাড়ি: কৃষ্ণপক্ষের ভরণী নক্ষত্রে ফলমূলের গাছ রোপণ করলে নাকি রোগপোকার উৎপাত হয় না। কিন্তু শুক্লপক্ষে ফলের গাছ লাগালে পোকার উপদ্রব হয়। আবার ফলের গাছ ছাড়া অন্যান্য গাছ শুক্লপক্ষে রোপণ করা যায়। সেক্ষেত্রে দ্রুত বৃদ্ধি হয়। এসব দিনক্ষণ ও তিথিনক্ষত্রের হিসেব মেনে চলেন জ্ঞানেন্দ্র সরকার। গত সাত দশক ধরে বৃক্ষরোপণ করে চলেছেন আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের (Alipurduar) পারপাতলাখাওয়ার বছর আশির বাসিন্দা জ্ঞানেন্দ্র। তাঁর কুড়ি বিঘা জমিতে এখন এক হাজারেরও বেশি গাছপালা।

জ্ঞানেন্দ্র ফলমূলের গাছ রোপণ করেন নাতি-নাতনিদের সঙ্গে নিয়ে। গাছের গুরুত্ব বোঝান খুদেদের। কারণ তিনি মনে করেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপরই তো থাকবে গাছরক্ষার ভার। আবার কোথাও গাছ কাটা পড়লে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন এই বয়সেও।

এই গাছ লাগানোর নেশা তিনি পেয়েছেন ছোটবেলায়, মায়ের কাছ থেকে। জীবনসায়াহ্নে এসেও নেশা তাঁকে ছাড়েনি। কোনও ৫ জুনের ধার ধারেন না তিনি। জ্ঞানেন্দ্রর কাছে বছরের নানা সময়ই পরিবেশ দিবস। তাঁর একটাই প্রার্থনা, ‘লোকদেখানো বৃক্ষরোপণ করলে হবে না। গাছ লাগালে সেটিকে সন্তানের মতো লালনপালন করতে হবে।’

ফালাকাটা-আলিপুরদুয়ার সড়কের কদমতলা মোড় থেকে উত্তরদিকে দেড় কিমি মেঠো পথ ধরে গেলেই দেখা যাবে একটি জঙ্গল। সেই জঙ্গলের মাঝেই পেশায় চাষি জ্ঞানেন্দ্রর বাড়ি। গোটা বাড়িটাই যেন মিনি জঙ্গল। বাড়ির চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ। আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, জাম্বুরা, লটকা, বেদানা, ড্রাগন ফল, তেঁতুল, আতা, লিচু, নারকেল থেকে শুরু করে মূল্যবান মেহগনি, সেগুন, চিকরাশি, সুপারি, শিমুল, গামার, নিম, জামরুলের মতো গাছপালায় ভর্তি বাড়ির চত্বর।

এখন রোজ কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই তিথি অনুযায়ী ওই বাড়িতে বৃক্ষরোপণও চলছে। বড় ছেলে গোপাল সরকারের কথায়, ‘আমার বাবা গাছপাগল মানুষ। ছোট থেকেই দেখে আসছি কত যত্ন করে একেকটি চারাকে বড় করে তোলেন। বাবাকে দেখে আমরাও গাছ লাগাতে শিখেছি।’ বুধবার তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির পাশেই একের পর এক কাঁঠাল গাছের চারা রোপণ করছেন জ্ঞানেন্দ্র। সঙ্গী দুই নাতি জয়দীপ ও রুদ্র। দাদুর কাছে গাছ লাগানোর পাঠ নিচ্ছে দুই খুদে।

কেন এই বৃক্ষপ্রেম? জ্ঞানেন্দ্রর কথায়, ‘নিজের বাড়িতে তখন কাঁঠাল গাছ ছিল না। কেনা কাঁঠাল খেয়ে চাহিদা মিটত না। তাই মায়ের কাছে শুনে কাঁঠালের বিচি বাড়ির চারপাশে পুঁতেছিলাম। কয়েক বছর পর বাড়িতে অনেক কাঁঠাল গাছ হল। নিজের গাছের কাঁঠাল খেয়ে আশ মিটল। তখন থেকেই আমার গাছ লাগানোর নেশা।’

আবার মাঝবয়সের একটি ঘটনা উল্লেখ করে জ্ঞানেন্দ্র বললেন, ‘গ্রামেই একদিন দেখছিলাম এক ব্যক্তি সমানে চারা গাছ কেটে দিচ্ছেন। তখন প্রতিবাদ করেছিলাম।’ কোথাও গাছ কাটা পড়লে এখনও তিনি দুঃখ পান। সন্তানের সঙ্গে গাছের তুলনা টেনে তাঁর বক্তব্য, ‘গাছ লালনপালন করতে হয়। আমি তো সন্তানের থেকেও চারাগাছকে বেশি যত্ন করি।’ যতদিন বাঁচবেন, গাছ লাগিয়েই যাবেন বলে তাঁর প্রতিজ্ঞা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *