প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: এক বছরে একশোটির বেশি হাতির প্রাণ বাঁচানোর রেকর্ড করেছে আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) ডিভিশন। রেলকর্মীদের তৎপরতায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১০১টি হাতিকে দুর্ঘটনার কবল থেকে বাঁচানো গিয়েছে। রেল সূত্রে খবর, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত রেল-হাতি সংঘাত এড়িয়ে চারটি হাতিকে প্রাণে বাঁচানো গিয়েছে। বিশেষ করে রেল ট্র্যাকে হাতির উপস্থিতি জানতে পেরে ট্রেন থামিয়ে হাতিকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলে রেলের দাবি।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের সিনিয়ার ডিসিএম অভয় গণপত সনপ বলেন, ‘লোকো পাইলট ও রেলকর্মীদের তৎপরতার ফলেই হাতিদের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গল রুটে রেল ও হাতির সংঘাত এড়াতে ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম সংক্ষেপে আইডিএস প্রযুক্তি সহ নানা উদ্যোগের ফলেই এই সাফল্য।’
রাজাভাতখাওয়া-আলিপুরদুয়ার জংশন ও কালচিনির মধ্যে প্রায় ১১ বার হাতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। একইরকমভাবে সেবক-গুলমা ও বাগরাকোটের মধ্যে প্রায় ১৭ বার হাতি দুর্ঘটনার সম্ভবনা ছিল। তবে লোকো পাইলট ও সহকারী লোকো পাইলটের তৎপরতার ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে বলে মনে করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেল সূত্রে খবর, গত বছর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাতির রেল ট্র্যাক পারাপারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মে মাসে মোট তিনবার হাতির পাল রেল ট্র্যাক পারাপার করেছে। ওই ঘটনাগুলিতে ১২টি হাতির প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে। জুন মাসে হাতির পালের রেল ট্র্যাক পারাপারের সাতটি ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনাগুলিতে নয়টি হাতির প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে। একইভাবে জুলাই মাসে চারটি পারাপারের ঘটনায় শাবক সহ দশটি হাতিকে প্রাণে বাঁচানো গিয়েছে। অগাস্ট মাসে প্রায় ২১টি হাতিকে দুর্ঘটনার আগেই রক্ষা করা গিয়েছে। রেলের সঙ্গে ছ’বার হাতির সংঘাত এড়ানো গিয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। ওই মাসে ১৮টি হাতি সুরক্ষিতভাবে রেল ট্র্যাক পারাপার করেছে। নভেম্বর মাসে আমন ধান পাকার সময় ছয়টি ঘটনায় সাতটি হাতির প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে বলে রেলকর্তারা জানিয়েছেন।
ডুয়ার্সের (Dooars) রেলের ট্র্যাকের ওপর দিয়েই একাধিক হাতির করিডর রয়েছে। রেল ট্র্যাক পারাপারের সময় হাতি ও ট্রেনের সংঘর্ষের উদাহরণ রয়েছে অনেক। ২০২৩ সালে রাজাভাতখাওয়া এসকে ১২৬ নম্বর লেভেল ক্রসিং গেট সংলগ্ন এলাকায় রেল ট্র্যাক পার করতে গিয়ে তিনটি হাতির মৃত্যু হয়। তারপরই রেল এমন সংঘাত এড়াতে বিভিন্ন নিয়ম নির্দেশিকা জারি করে। নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয় লোকো পাইলটদের। হাতির আচার-আচরণ বুঝতে লোকো পাইলটদের বিশেষ সচেতনতামূলক কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হয়। আইডিএস প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। সেইসবের সুফল হিসেবেই হাতির পাল সুরক্ষিতভাবে রেললাইন পারাপার করতে পেরেছে।