আলিপুরদুয়ার: সকালে বৃষ্টি দেখে দ্রুত খিচুড়ি রান্নার আয়োজন করেছিলেন আলিপুরদুয়ার শহরের উদয়ন বিতান এলাকার বাসিন্দা দেবযানী মিত্র। বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী আর ছোট ছেলে। সকালে খিচুড়ি খাওয়ার পরই বাড়ির বাকি কাজ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন দেবযানী। তবে কীসের কী! তাঁর সেই পরিকল্পনায় আক্ষরিক অর্থেই জল ঢেলে দিল দিনভর বৃষ্টি।
সকালে বৃষ্টি আর খিচুড়ি যে খুশি দিয়েছিল দিনভর সেই বৃষ্টিই ভোগাল। কারণ, সপ্তাহের জমে থাকা কাপড় কাচাকাচি রবিবার সারেন দেবযানী। তবে এদিন আকাশের মুখ ভার থাকায় আর সেই সাহস দেখাননি। দেবযানীর কথায়, ‘রবিবার করেই জমে থাকা সব জামাকাপড় ধোয়া হয়। আকাশ দেখে আজকে আর সেটা করা হল না। মুশকিল হল যে, কাল থেকে তো আবার অফিস রয়েছে। ছেলেকে স্কুলে পাঠানোর তাড়া থাকে। এগুলো যে কখন ধুতে পারব, সেটাই চিন্তা।’
দেবযানী একা নন। গত দু’দিন ধরে আলিপুরদুয়ার শহরের প্রায় প্রতি ঘরে গৃহিণীদের মাথায় একরাশ দুশ্চিন্তা কাপড় ধোয়া নিয়ে। আর যাঁরা ধুয়ে ফেলেছেন, তাঁদের চিন্তা সেগুলো শুকোনো নিয়ে। যেমন চিত্তরঞ্জনপল্লির আরেক বাসিন্দা চিত্রা সরকারের কাপড় ধোয়া থেকে বেশি চিন্তা, যেগুলো ধোয়া হয়েছে সেগুলো শুকোনো নিয়ে। গত দু’দিন ধরেই আকাশের মুখ ভার। রবিবার তো গোটা দিনই শহরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়েছে। এমন অবস্থা যে হতে পারে, সেটা অনেকেই আন্দাজ করতে পারেননি।
তবে আবহাওয়া দপ্তর কিন্তু আগে থেকেই সতর্ক করে রেখেছিল বৃষ্টি নিয়ে। আগামী কয়েকদিন যে এই রকম হালকা বৃষ্টি হবে, সেটারও পূর্বাভাস দেওয়া রয়েছে। শনিবার থেকেই জেলা শহরের আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হয়েছিল শনিবার। রবিবার সকাল থেকেই সেই ধারা অব্যাহত ছিল। আর বর্ষার এই একটানা বৃষ্টিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে গৃহিণীদের।
এদিন চিত্রা বলছিলেন, ‘সকালে বৃষ্টি হলেও ভেবেছিলাম দুপুরে হয়তো রোদ উঠবে। তাই কয়েকটি জামাকাপড় ধুয়ে দিয়েছি। সেগুলো মনে হয় আর শুকোবে না। এইভাবে বৃষ্টি থাকলে কাপড় শুকোলেও সেগুলো থেকে বাজে গন্ধ বের হবে। পরে আবার ধুয়ে দিতে হবে। মানে এক কাজ দু’বার করা। দু’বার পরিশ্রম।’ কথা বলতে বলতেই তিনি আক্ষেপ করছিলেন, কেন যে সকালে কাপড় ভিজিয়েছিলেন। সুতলিপট্টির আরেক বাসিন্দা অন্তরা গোস্বামী আবার এই সমস্যা মেটানোর জন্য একটা ঘরে সব কাপড় মেলে দিয়েছেন। আর ফ্যান চালিয়ে রেখেছেন। সেটাই নাকি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায়। শহরের বিভিন্ন এলাকার গৃহিণীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভেজা কাপড় শুকোতে এই কাজ করছেন অনেকেই।
কেউ আবার বারান্দায় বা ব্যালকনিতে কাপড় মেলে রেখেছেন শুকোনোর জন্য। তবে লাগাতার বৃষ্টি চলতে থাকলে কাপড় নিয়ে যে সমস্যা সেটাও মানছেন অনেকেই। সঞ্জয় কলোনির বাসিন্দা মায়া রবিদাসের বাড়িতে বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চার জন্য প্রচুর কাপড় ধুয়ে দিতে হচ্ছে। তার কথায়, ‘বর্ষা মানেই জামাকাপড় নিয়ে সমস্যা। প্রতিবারই হয়। এবার তো তা-ও কম। অনেকদিন শুকনো পেয়েছি। তবে জামাকাপড় শুকোনোর চিন্তা তো থাকেই।’ ‘আশাবাদী’ মায়া বলছিলেন, ‘দুপুরে যদি দুই ঘণ্টাও রোদ পাই সেটাও অনেক কাজে দেবে।’ তবে তেমনটা কিন্তু হয়নি। গৃহিণীদের চিন্তা বাড়িয়ে দিনভর মেঘলাই ছিল আকাশ।