প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার : কথায় বলে, কুপুত্র যদিও হয়, কুমাতা কখনও নয়। কিন্তু ডুয়ার্সে পরপর দু’দিনের দুটি ঘটনায় যেন সেই প্রবাদ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। শনিবারই মালবাজারের এক মা সন্তানকে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর রবিবার রাতে নাবালক সন্তানকে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ফেলে রেখে চলে গেলেন আরেক মা।
পুলিশ সেই নাবালককে উদ্ধার করেছে। আপাতত সে সিডব্লিউসি’র তত্ত্বাবধানে রয়েছে। বাড়ির লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রেমিকের টানে ঘর ছাড়ার সময় সন্তানকে ফেলে রেখে গিয়েছেন সেই বধূ। সেই নাবালকও মায়ের সেই সম্পর্কের বিষয়টি জানে।
নিউ আলিপুরদুয়ার জিআরপি’র ওসি ভাস্কর সেন বলেন, ‘যখন ওই নাবালককে উদ্ধার করা হয়, সে তখন স্টেশন চত্বর থেকে অনেকটাই দূরে চলে গিয়েছিল। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছে।’
বছর বারোর সেই কিশোর অসমের বাসিন্দা। অসম থেকে তাদের দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। সেইমতো মায়ের সঙ্গে ট্রেনে চড়েছিল পঞ্চম শ্রেণির সেই ছাত্র। তবে মাঝপথে ঘটে যায় অন্য ঘটনা। অসম রাজ্য পার হতেই ছেলেকে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে নামিয়ে রেখে চলে গেলেন মা। প্রথমে মায়ের চলে যাওয়ার বিষয়টি সে বুঝতে পারেনি। খানিক পরে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত রেল ট্র্যাক ধরে সেই ট্রেনের ‘পিছু নেয়’। রবিবার মধ্যরাতে নির্জন রেললাইন ধরে সে কয়েকশো মিটার চলে যায়। কালজানি সেতু অতিক্রম করার আগেই অবশ্য স্থানীয়দের নজরে পড়ে যায় সেই কিশোর। জনৈক ব্যক্তি প্রথমে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন জিআরপি অফিসে খবর দেন। সেখান থেকে খবর যায় আলিপুরদুয়ার থানায়। শেষে আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ ওই পড়ুয়াকে উদ্ধার করে। সোমবার পরিবারের লোকজনকে জানানো হয়েছে।
সেই কিশোর জানিয়েছে, তার বাবা মারা গিয়েছে। বাড়িতে মা, কাকা ও ঠাকুমার সঙ্গে থাকে। রবিবার হঠাৎ তার মা বাইরে কাজে যেতে চায়। সেও মায়ের পিছু নেয়। দিল্লিগামী ট্রেনে চড়ে তারা। তাদের সঙ্গে আরেকজন পুরুষ সঙ্গী ছিল বলে জানিয়েছে সেই নাবালক। তাকে সে চেনে না।
নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে ট্রেনটি স্টপ দেয় রাতে। সেখানে মা তাকে জোর করে নামিয়ে দেয় বলে জানিয়েছে ছেলেটি। আশপাশে কেউ ছিল না। সেই সুযোগে রেললাইন ধরে হাঁটা দেয়। কালজানি সেতুর কাছে তাকে দেখে কয়েকজনের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
ওই পড়ুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাড়ির নাম, ঠিকানা জোগাড় করে পুলিশ। তারপর পরিবারের লোকজনকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আলিপুরদুয়ার থানায় আসতে বলা হয়েছে। তবে, এদিন বিকাল অবধি কেউ আসেনি। সেই কিশোরকে বাড়ির লোকজনের অপেক্ষায় থানায় হতাশ হয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে।
আলিপুরদুয়ার থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পড়ুয়ার বাড়ির লোকজন এলে সিডব্লিউসি’র মাধ্যমে তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।