রাজু সাহা, শামুকতলা: উঁচু ক্লাসের ছাত্রীদের যৌন হেনস্তা করার অভিযোগে হাইস্কুলের এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করল শামুকতলা থানার পুলিশ। আলিপুরদুয়ার-২ (Alipurduar) ব্লকের লোকনাথপুর হাইস্কুলে ঘটনাটি ঘটেছে। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম ভাস্কর পাল। তিনি ভূগোলের শিক্ষক। তবে, ওই শিক্ষক তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ভাস্করের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে।
শামুকতলা থানার ওসি বিশ্বজিৎ দে জানিয়েছেন, জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির দেওয়া একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ উঠেছে। তা হল, এমন অভিযোগ ওঠার পরও সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বরং স্কুলে কার্যত সালিশি বৈঠক ডেকে বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ক্ষিতীশচন্দ্র দেবনাথের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অভিযুক্ত শিক্ষক ভাস্কর কন্যাশ্রী প্রকল্পের কাজ দেখাশোনা করেন। অভিযোগ, কন্যাশ্রী সেলের কম্পিউটার রুমে ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে অশালীন আচরণ করেন তিনি। এসব ঘটনা ঘটেছে দেড় মাস আগে। তারপর কয়েকজন ছাত্রী প্রথমে বিষয়টি দুজন শিক্ষককে জানায়। কিন্তু সেই দুজন নাকি ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেননি। কিছুদিন পর ওই ছাত্রীরা আবার অভিযোগ জানায় এক শিক্ষিকার কাছে। সেই শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষককে গোটা ঘটনাটি জানান। এরপরই প্রধান শিক্ষক অভিভাবকদের ডেকে আলোচনা করে বিষয়টি স্কুলে মিটমাট করে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনওভাবে খবর চলে যায় আলিপুরদুয়ার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে। তারাই পুলিশকে জানায়। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বুধবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ওই স্কুল শিক্ষককে।
প্রধান শিক্ষক মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আর ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নবেন্দু মণ্ডলও সংবাদমাধ্যমকে বিশেষ কিছু বলতে নারাজ। কেবল বলেন, ‘এটা একটি বিচারাধীন বিষয়। তাই এই নিয়ে আমাদের বিশেষ কিছু বলার নেই। তবে আমরা, স্কুলের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই ঘটনায় হতবাক। প্রশাসনের ওপরমহল থেকে আমাদের কাছে এই ঘটনার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই রিপোর্ট পাঠিয়েওছিল। তার পরও কেন এই ঘটনা ঘটল, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।’
স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে না চাইলেও সরব হয়েছে হেনস্তার শিকার হওয়া ছাত্রীরা। এমনই এক ছাত্রী বলে, ‘আমাকে ব্যাড টাচ করছিলেন ভূগোলের শিক্ষক। আমি স্যরকে বলি, এটা আমার পছন্দ নয়। এগুলো করবেন না। পরে আমি শুনি, অন্যদের সঙ্গেও তিনি এমন করেছেন। আমি মা-বাবাকে গোটা বিষয়টি জানাই।’
এক অভিভাবকের কথায়, ‘আমার মেয়ে বাড়িতে এসে ভূগোল শিক্ষকের খারাপ আচরণের কথা জানায়। আমি সেটা প্রধান শিক্ষককে জানাই। তারপরে স্কুলে মিটিং ডেকে বলা হয়, এধরনের ঘটনা আর হবে না। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা স্কুলে ঘটলে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের কার ভরসায় স্কুলে পাঠাব?’
এত কিছু হওয়ার পরেও কেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলোচনা করে মিটমাট করার চেষ্টা করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কুমারগ্রামের বিধায়ক মনোজকুমার ওরাওঁ। মনোজ বলেন, ‘একজন দায়িত্বশীল প্রধান শিক্ষক কী করে এই ঘটনার মিটমাট করার জন্য চেষ্টা করলেন, সেটা আশ্চর্যের।’ খুব শীঘ্রই তিনি মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানাবেন বলে দাবি মনোজের।