ফালাকাটা: সকাল থেকে রাত-দিনে কতবার যে লোডশেডিং হয় ফালাকাটায় তার কোনও হিসেব নেই। ঘনঘন লোডশেডিং নিয়ে নাগরিক পরিষেবা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে পুরসভা, হাসপাতাল, বিডিও অফিস থেকে শুরু করে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। কিছুক্ষণ পরপর লোডশেডিং হওয়ায় শহরের ব্যবসাও মার খাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, কবে, কতক্ষণ লোডশেডিং হবে তা আগাম জানাতে পারছে না বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম। ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।
সোমবার সকাল থেকে কয়েক দফায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল ফালাকাটা শহর। সন্ধ্যার পর থেকে লাগাতার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়। কখনও ১৫ মিনিট তো কখনও ৩০ মিনিটের উপরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে শহর। লোডশেডিং নিয়ে বিপাকে পড়েন বাচ্চা থেকে বয়স্ক এবং অসুস্থ নাগরিকরা। সাধারণ মানুষও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন এই ঘনঘন লোডশেডিংয়ে। এরপরেই নাগরিকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লোডশেডিং নিয়ে লাগাতার পোস্ট করতে থাকেন। মঙ্গলবার অবশ্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লোডশেডিং হয়নি বলেই নাগরিকরা জানিয়েছেন। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ফালাকাটা সুপারস্পেশালিটি কর্তৃপক্ষ। লোডশেডিং হলেই হাসপাতালের লিফট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বহুবার লোডশেডিংয়ের জন্য লিফটে রোগী ও সাধারণ মানুষ আটকে থাকার ঘটনাও ঘটেছে। আবার অনেক সময় রোগীকে অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়ার পরও বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তখন অপারেশনও বন্ধ রাখতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। যদিও বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই জেনারেটরের তেলের দাম প্রচুর। চলতি দু-তিন বছরে জেনারেটরের জন্য তেলের দাম কয়েক লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্তাদের দাবি, ফালাকাটা শহরের নির্দিষ্ট এলাকায় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন তার থেকে বেশি ইউনিট ব্যবহার হচ্ছে। লাগামহীনভাবে টোটো চার্জ এবং মাত্রাতিরিক্ত এসি ব্যবহারের ফলে ট্রান্সফর্মারে প্রভাব পড়ছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় পুড়ে যাচ্ছে ট্রান্সফর্মার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ দপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘একটি নতুন ট্রান্সফর্মারের বাজারমূল্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। অতিরিক্ত লোড পড়ার জন্য মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন এলাকার ট্রান্সফর্মার বিকল হচ্ছে। এতে আমাদের দপ্তরের ট্রান্সফর্মার পালটাতে গিয়ে প্রচুর লোকসান হচ্ছে। এই কাজ করার জন্যও অনেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ট্রান্সফর্মার আবার আলিপুরদুয়ার শহরে থাকা ডিভিশন অফিস থেকে নিয়ে আসতে হয়। তাই এই মুহূর্তে ফালাকাটার কোনও এলাকায় ট্রান্সফর্মার বিকল হলে ৪০ কিমি দূরে গিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে। ফালাকাটা বা গ্রামীণ এলাকায় কোনও ট্রান্সফর্মার বিকল হলে আলিপুরদুয়ার গিয়ে বিকল্প নিয়ে আসতেই এখন কালঘাম ছুটছে বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীদের। এই অবস্থায় বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় রাতে কোনও ট্রান্সফর্মার নষ্ট হলে তা পালটাতে একদিন লেগে যায়। আবার অনেকক্ষেত্রে তার থেকেও বেশি সময় লাগে। এইসব কারণেই ফালাকাটাতে উন্নত বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে গেলে এখানে ডিভিশনাল অফিস করার দাবিও তুলেছেন কর্মীরা। ফালাকাটা শহরে ডিভিশন অফিস হলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিলে দ্রুত তা মেরামত করা সম্ভব হবে বলেই বিদ্যুৎ দপ্তর জানিয়েছে।